বিহারে (Bihar Election) আবার ভোটের হাওয়া জোরদার। বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে রাজ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মূল লড়াই মহাগঠবন্ধন (RJD-কংগ্রেস) ও এনডিএ (বিজেপি-জেডিইউ) জোটের মধ্যে হলেও, এই ভোটের অনেকাংশেই নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে মুসলিম ভোট। বিহারের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৮% হল মুসলিম, সংখ্যায় প্রায় ২.৩ কোটি। এবার প্রশ্ন উঠছে — এই ভোটব্যাঙ্ক কি এককভাবে কোনও দলকে জিতিয়ে দিতে পারে?
ঐতিহাসিকভাবে বিহারের মুসলিম ভোটাররা মূলত মহাগঠবন্ধনের পক্ষেই ভোট দিয়ে এসেছেন। বিশেষত RJD-র লালু-তেজস্বী পরিবার ও কংগ্রেসের প্রতি একটা আস্থা ছিল এই ভোটারদের মধ্যে। তবে রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক চিত্র অনেকটাই বদলেছে। এবার নির্বাচনী ময়দানে আছেন দুই নতুন শক্তি — আসাদউদ্দিন ওয়েইসির AIMIM এবং প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ।
AIMIM গত বিধানসভা নির্বাচনে সীমাঞ্চল অঞ্চলে পাঁচটি আসনে জয়লাভ করে চমক দেখিয়েছিল। যদিও পরে তাঁদের অধিকাংশ বিধায়ক RJD-তে যোগ দেন, তবুও দলটি ওই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়। এবারও AIMIM সীমাঞ্চলে ও অন্যান্য মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে প্রার্থী দিচ্ছে এবং মুসলিম ভোটকে টার্গেট করছে।
পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট থেকে রাজনীতিবিদে রূপান্তরিত হওয়া প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ এবার প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাঁর দল তুলে ধরেছে এক “বিকল্প শাসন মডেল” — যেখানে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
প্রশান্ত কিশোরের “৪০-২০ স্ট্র্যাটেজি” অনুযায়ী, তাঁর লক্ষ্য হলো ৪০% হিন্দু ও ২০% মুসলিম ভোট একত্রিত করে একটি তৃতীয় শক্তি তৈরি করা, যা RJD-কংগ্রেস ও BJP-জেডিইউ দুই জোটের বিকল্প হয়ে উঠবে।
সীমাঞ্চল অঞ্চলে — যেমন কিশনগঞ্জ, কাতিহার, পুরনিয়া, আররিয়া — মুসলিম জনসংখ্যা ৫০-৭০% এর মধ্যে। ফলে এখানে মুসলিম ভোটই নির্ধারক। ২০২০ সালে AIMIM এখানেই সবচেয়ে সফল হয়েছিল। এই অঞ্চলে যদি মুসলিম ভোট বিভক্ত হয় — মহাগঠবন্ধন, AIMIM ও জন সুরাজের মধ্যে — তাহলে সুবিধা হতে পারে এনডিএ-র।
মুসলিম ভোটারদের একটি বড় অংশ এখনও মহাগঠবন্ধনকেই নিরাপদ মনে করছেন। তাঁদের মতে, বিজেপির বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ দিতে পারে তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন RJD ও কংগ্রেস জোট। তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি ইস্যুতে এক ধরনের হতাশা রয়েছে, যার ফলে কিছু ভোটার নতুন শক্তির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
AIMIM-কে অনেকে মুসলিমদের নিজস্ব প্রতিনিধিত্বের প্রতীক হিসেবে দেখলেও, কেউ কেউ একে ভোট কাটার দল বলে মনে করেন। অন্যদিকে, জন সুরাজ এখনও মুসলিমদের মধ্যে বিশ্বাস অর্জনের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।