‘কোল্ডরিফ’ কফ সিরাপে শিশুমৃত্যু, গ্রেফতার স্রেসান ফার্মার কর্ণধার

চেন্নাই: মারণ কফ সিরাপে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে গ্রেফতার হলেন স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক রঙ্গনাথন। এই সংস্থাই তৈরি করেছিল বিতর্কিত ‘কোল্ডরিফ’ কফ সিরাপ, যা মধ্যপ্রদেশ ও…

Cough Syrup Child Deaths Arrest

চেন্নাই: মারণ কফ সিরাপে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে গ্রেফতার হলেন স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক রঙ্গনাথন। এই সংস্থাই তৈরি করেছিল বিতর্কিত ‘কোল্ডরিফ’ কফ সিরাপ, যা মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে অন্তত ২১ জন শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, সিরাপটিতে বিপজ্জনক শিল্প রাসায়নিক ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল (Diethylene Glycol)-এর পরিমাণ ভয়ঙ্করভাবে বেশি ছিল।

Advertisements

চেন্নাই থেকে গ্রেফতার

পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে চেন্নাই থেকে রঙ্গনাথনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ট্রানজিট রিমান্ডের মাধ্যমে তাঁকে মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা জেলায় নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে সর্বাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এনআইএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিজ্ঞাসাবাদের পরই এই গ্রেফতারি হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, কোল্ডরিফ সিরাপ শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশেই নয়, ওড়িশা ও পুদুচেরিতেও সরবরাহ করা হয়েছিল। এরই মধ্যে তামিলনাড়ুর ড্রাগ কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্টের এক ২৬ পৃষ্ঠার রিপোর্টে ফাঁস হয়েছে ওই ওষুধ প্রস্তুত কারখানার ভয়াবহ চিত্র। সেখানে উল্লেখ, কারখানার অবস্থা ছিল অস্বাস্থ্যকর, যন্ত্রপাতি ছিল মরচেধরা, এবং উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়েছে নন-ফার্মা গ্রেড রাসায়নিক পদার্থ।

সিরাপে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত শিল্প রাসায়নিক Cough Syrup Child Deaths Arrest

সরকারি পরিদর্শনে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য মেলে— সিরাপে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত শিল্প রাসায়নিক মেশানো হয়েছিল, যেখানে অনুমোদিত সীমা মাত্র ০.১ শতাংশ। তবুও গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস (GMP) সার্টিফিকেশন না থাকলেও সংস্থাটি ওষুধ তৈরি ও বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছিল। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই রাজ্য ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কারখানায় উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেয় এবং সংস্থার লাইসেন্স স্থগিত করে।

এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সূত্রে জানা গিয়েছে, সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (CDSCO) ইতিমধ্যেই ওই ওষুধের উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করেছে। কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উৎপাদন ইউনিটগুলির মান ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত দায়িত্ব রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলারদের ওপরেই বর্তায়।

মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ভয়াবহ ফাঁকফোকর

‘ফর্ম ২৫’ অনুযায়ী যে লাইসেন্সের মাধ্যমে সাধারণ অ্যালোপ্যাথিক ফর্মুলেশন তৈরি করা হয়, তার ইস্যু এবং নিয়ন্ত্রণও রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলারদের হাতে। চূড়ান্তভাবে লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্তও তাঁরাই নেন।

এই ঘটনায় দেশজুড়ে ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে নেমে এসেছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। শিশু মৃত্যুর দায়ে গ্রেফতার হওয়া এক ওষুধ নির্মাতার এই ঘটনা ফের তুলে ধরল ওষুধ উৎপাদন ও মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ভয়াবহ ফাঁকফোকর।