শ্লীলতাহানিতে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে অবশেষে ক্ষমাপ্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Controversial Comments on Molestation Lead to Apology from Home Minister কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (home minister) জি পরমেশ্বর বেঙ্গালুরুতে একটি যৌন নিপীড়ন মামলা নিয়ে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের…

home minister apology

Controversial Comments on Molestation Lead to Apology from Home Minister

কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (home minister) জি পরমেশ্বর বেঙ্গালুরুতে একটি যৌন নিপীড়ন মামলা নিয়ে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের পর ব্যাপক ক্ষোভের মুখে পড়ে ক্ষমা প্রকাশ করেছেন। গতকাল তিনি বলেছিলেন যে, বড় শহরে এ ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে থাকে। এই মন্তব্যের পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং বিরোধী দল বিজেপি তাঁর পদত্যাগের দাবি জানায়। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার তিনি স্পষ্টীকরণ দিয়ে বলেন, তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে বোঝা হয়েছে এবং এর জন্য তিনি দুঃখপ্রকাশ করছেন।

পরমেশ্বর (home minister) বলেন

পরমেশ্বর বলেন, “আমি গতকাল যে বক্তব্য দিয়েছিলাম, তা সঠিকভাবে বোঝা যায়নি। আমি সবসময় নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নির্ভয়া তহবিলের সঠিক ব্যবহার করে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমি কাজ করেছি। আমি চাই না আমার বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হোক। যদি আমার কথায় কোনও নারী আঘাত পেয়ে থাকেন, তবে আমি তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমা চাইছি।”

ঘটনার পটভূমি

এই বিতর্কের সূত্রপাত গত ৩ এপ্রিল বেঙ্গালুরুর সুদ্দাগুন্তেপাল্য এলাকায় একটি যৌন নিপীড়নের ঘটনা থেকে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, রাত প্রায় ১:৫৫-এ দুই মহিলার পিছু নিয়ে এক ব্যক্তি তাদের একজনকে শ্লীলতাহানি করে পালিয়ে যায়। এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করে এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৭৪ (শ্লীলতাহানি), ৭৫ (যৌন হয়রানি) এবং ৭৮ (পিছু নেওয়া) ধারায় অভিযোগ গঠন করে। তবে ভুক্তভোগী মহিলারা এখনও অভিযোগ দায়ের করেননি।

এই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরমেশ্বর (home minister) বলেছিলেন, “বেঙ্গালুরুর মতো বড় শহরে এ ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে। আমি পুলিশ কমিশনারকে টহল জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছি। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তাঁর এই মন্তব্যকে অনেকে ‘অসংবেদনশীল’ বলে সমালোচনা করেন। বিজেপি নেতা শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেন, “এই বক্তব্য নারীদের প্রতি অসম্মানজনক এবং অপরাধকে তুচ্ছ করে দেখানোর প্রয়াস। পরমেশ্বরের পদত্যাগ করা উচিত।”

জনরোষ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

সামাজিক মাধ্যমে এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা হয়। অনেকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (home minister) হিসেবে তাঁর দায়িত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া নয়। একজন ব্যবহারকারী লেখেন, “বড় শহরে এমন ঘটনা ঘটে বলে কি আমরা চুপ করে থাকব? এটা কোনও জবাবদিহি নয়।”

বিরোধী দল বিজেপি এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে সিদ্দারামাইয়া সরকারের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি বি ওয়াই বিজয়েন্দ্র বলেন, “এই মন্তব্য সরকারের উদাসীন মনোভাবের প্রমাণ।”

Advertisements

জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ)ও এই মন্তব্যের নিন্দা করে পরমেশ্বরের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “মন্ত্রীর এই বক্তব্য নারীদের প্রতি অপরাধকে তুচ্ছ করে দেখায়, যা অগ্রহণযোগ্য।”

পরমেশ্বরের স্পষ্টীকরণ

বিতর্ক বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার পরমেশ্বর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, “আমার উদ্দেশ্য কখনও অপরাধকে সমর্থন করা বা তুচ্ছ করা ছিল না। আমি শুধু বলতে চেয়েছিলাম যে, বড় শহরে এ ধরনের ঘটনা ঘটে, কিন্তু আমরা তা রোধ করতে কাজ করছি। আমি নিজে একজন মেয়ের বাবা, আমি নারীদের নিরাপত্তার গুরুত্ব বুঝি।” তিনি আরও জানান, পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঘটনার তদন্ত ত্বরান্বিত করতে এবং অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করতে।

লখনউয়ের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে নাইট শিবিরে বড় রদবদল

সমাজে প্রভাব

এই ঘটনা বেঙ্গালুরুতে নারী নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছে। শহরটি ভারতের প্রযুক্তি রাজধানী হলেও, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা এখানে নতুন নয়। ২০১৭ সালে নববর্ষের উৎসবে গণ-শ্লীলতাহানির ঘটনার পরও পরমেশ্বরের একটি মন্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। সেই সময়ও তিনি বলেছিলেন, “এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।” এই পুনরাবৃত্তি অনেকের মনে ক্ষোভ জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শহরে রাতের বেলা পুলিশি টহল বাড়ানো এবং সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। একজন নারী বাসিন্দা বলেন, “আমরা নিরাপদ বোধ করতে চাই। মন্ত্রীর কথায় আমাদের আস্থা কমে যায়।”

সরকারের অবস্থান

মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এখনও এই বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। তবে কংগ্রেসের একাংশ বলছে, পরমেশ্বরের ক্ষমা প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিতর্ক মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিজেপি এই ঘটনাকে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত, পরমেশ্বরের ক্ষমা প্রকাশ ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত করলেও, বেঙ্গালুরুতে নারী নিরাপত্তার প্রশ্নটি এখনও উত্তপ্ত রয়ে গেছে।