রাহুলকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বানাতে এখন থেকেই ময়দানে ‘খেলা’ শুরু সোনিয়ার ?

 সবেমাত্র লোকসভা নির্বাচন ২০২৪-এর মহাপর্ব মিটেছে (Congress)। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী (Congress) এখন থেকেই কী পরবর্তী লোকসভার ব্লু-প্রিন্ট বানানো শুরু করে দিয়েছেন? কংগ্রেস (Congress) হাইকম্যান্ডের সাম্প্রতিক…

short-samachar

 সবেমাত্র লোকসভা নির্বাচন ২০২৪-এর মহাপর্ব মিটেছে (Congress)। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী (Congress) এখন থেকেই কী পরবর্তী লোকসভার ব্লু-প্রিন্ট বানানো শুরু করে দিয়েছেন? কংগ্রেস (Congress) হাইকম্যান্ডের সাম্প্রতিক কিছু কিছু পদক্ষেপে সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট হচ্ছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

   

তৃতীয় মোদি সরকারের বিরোধী দলনেতা হিসেবে সোনিয়াপুত্র রাহুল যেন ‘ভার্সন ২.০’ অবতারে মাঠে নেমেছেন। রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে সোনিয়া নিজেও সংসদীয় রাজনীতিতে এখনও প্রাসঙ্গিক। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ মিটিং থেকে শুরু করে বিরোধীদের সাথে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে রাহুলকেই যেন বারবার সামনে এগিয়ে আনা হচ্ছে। কিন্তু সূত্রের খবর আড়ালে থেকে এখনও কিন্তু অভিজ্ঞ গাইডের ভূমিকায় সেই সোনিয়াই।

সংসদীয় দলের বৈঠকে সোনিয়ার বার্তা তাই খুব স্পষ্ট। আত্মতুষ্টির কোন জায়গা নেই, এক হয়ে চলতে হবে। কোথাও গিয়ে এটাকে ইন্ডিয়া ব্লকের বাকি দলগুলির কাছেও পরোক্ষে সমঝোতার বার্তা হিসেবে মনে করছেন অনেকে। সোনিয়ার বক্তব্য, পরিস্থিতি এই মুহূর্তে তাঁদেরই অনুকূলে। বাস্তবিক চিত্রও কিন্তু অনেকটা সেরকমই ইঙ্গিত করছে।

দীর্ঘ ১০ বছর পর ৯৯ কংগ্রেসি সাংসদ নিয়ে আবারও সংসদ ভবনে বিরোধী দলের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল গান্ধী রীতিমতন সবার নজর কেড়েছেন। এই মরশুমে নিজের প্রথম সংসদীয় ভাষণে দিশেহারা করে ছেড়েছেন মোদী-শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির তাবড় মহারথীদের।

কংগ্রেস আবার ফিরছে, দলীয় নেতাদের সংযত থাকার নির্দেশ সোনিয়ার

সেই সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতেও রাহুল কিন্তু তাঁর গ্রহণযোগ্যতা এবং ভিজিবিলিটি বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। নিট কেলেঙ্কারি নিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে দেখা করতে ছুটে গিয়েছিলেন রাহুল। আন্দোলনরত লোকোপাইলট দের সাথেও দেখা করেছেন তিনি। আবার ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রাতে তাঁকে জুতো বানাতে শেখানো কারিগরকে পাঠিয়েছেন দামি সেলাই মেশিন।

কোথাও গিয়ে একটা জিনিস স্পষ্ট, জননেতা এবং বিরোধী আন্দোলনের মুখ হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন রাহুল। আর সূত্রের খবর এই গোটা ব্যাপারটাই হচ্ছে তাঁর মা সোনিয়া গান্ধীর যত্নশীল গাইডেন্সে। বিপর্যস্ত ওয়াড়নাড়ে ছুটে গিয়েছেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। আগামী দিনে প্রিয়াঙ্কাই সেখানে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চলেছেন।

অর্থাৎ জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে সোনিয়া রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কারা। ২০২৪ লোকসভার আগেও একটা প্রশ্ন বিরোধী ইন্ডিয়া জোটকে কুরেকুরে খেয়েছিল। মোদীর সাথে টক্কর দেওয়ার মতো মুখ কোথায়?

আগামী দিনে যাতে সেই প্রশ্নের মুখোমুখি আবারও না হতে হয়, তার জন্য এখন থেকেই কড়া মেহনত শুরু করেছেন সোনিয়া-রাহুলেরা। যদিও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর এটাই লাস্ট টার্ম। তারপরে নতুন মুখকে নিয়ে আসা হবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। সেক্ষেত্রে এখন থেকেই তাই সংসদের খেলায় নিজেদের কন্ট্রোল রাখতে চাইছেন সোনিয়ারা।

জীবন ও স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম থেকে প্রত্যাহার হোক জিএসটি, নির্মলার কাছে আর্জি নিতিনের

সামনেই চার রাজ্যের বিধানসভা ভোট। লোকসভার নিরিখে চার রাজ্যেই বেশ ভালো জায়গায় রয়েছে ইন্ডিয়া জোট। সোনিয়ার দলীয় বার্তা তে এককাট্টা হয়ে লড়াই করার প্রসঙ্গ যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। মহারাষ্ট্র, বিহার হরিয়ানার মতো ক্ষেত্রে শরিক দলগুলিকেও গুরুত্ব দেওয়ার বার্তাই দিলেন সোনিয়া? সেই সম্ভাবনাই এখন সব থেকে বেশি। লোকসভা ভোটের আগেই তৃণমূল কংগ্রেসসহ একাধিক দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জমিদারি মানসিকতার অভিযোগ তুলেছিল।

লোকসভার পরপরই বঙ্গে তৃণমূল তথা মমতা বিরোধী অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। বঙ্গের রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের মতে যা কার্যত মমতাকে তুষ্ট করারই পদক্ষেপ। সেই সঙ্গে ইন্ডিয়া ব্লকের মধ্যে মমতাপন্থী অখিলেশ থেকে শুরু করে উদ্ধব সবাইকেই যেন একটা বার্তা দিতে চাইলেন সোনিয়ারা। বিধানসভা ভোটে সিট শেয়ারিং নিয়েও এখন থেকেই বার্তা দেওয়া হচ্ছে বলেও অনেকে মনে করছেন।

সোনিয়া তার দলের নেতাদের প্রতি বার্তা দিয়েছেন যে ” আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলোতে যদি ভালো ফল করা যায় তাহলে জাতীয় রাজনীতির রংই বদলে যাবে। ” অর্থাৎ একদিক থেকে বলা যায় যে, বিধানসভা দিয়েই লোকসভা জয়ের লক্ষ্যে স্থির সোনিয়া। এতদিন ধরে লোকসভার নির্বাচনে সাধারণত গেরুয়া আবির উড়তে দেখা গিয়েছে।

এইবার সেই গেরুয়াকে সবুজে পরিণত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সোনিয়া। তাই বদলে যাওয়া রাহুলকে নিয়ে কংগ্রেসের প্রতি বাকিদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে এখন থেকেই মাঠে নেমেছেন তিনি। কারণ হাতে পাঁচ বছর থাকলেও, সময় আর নদীর স্রোত কিভাবে যে নিমেষের মধ্যে বয়ে যায়, তা ধরার সাধ্য কারোরই নেই।