ভাঙছে বালোচিস্তান, হতে পারে চট্টগ্রাম! বিস্ফোরক বাংলার সাংসদ

চট্টগ্রাম (Chittagong) বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে— এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো…

Jyotirmoy Singh Mahato

চট্টগ্রাম (Chittagong) বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে— এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো (BJP MP Jyotirmoy Singh Mahato)। হুগলি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির উদ্যোগে নারী স্বশক্তিকরণ ও রানী অহল্যাবাঈ হোলকারের ৩০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চুঁচুড়ায় এক সভায় অংশগ্রহণ করতে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তীব্র হুঁশিয়ারি
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিজেপি সাংসদ বলেন, “ভারতের সঙ্গে যদি বাংলাদেশ সংঘাতের পথে যায়, তাহলে পরিস্থিতি যে কোনও সময় খারাপ হতে পারে। যেমন এক সময় পূর্ব পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হয়েছে, তেমনই আজ যদি বাংলাদেশের কোনও অংশে বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দেয়, তাহলে চট্টগ্রামও একদিন আলাদা রাষ্ট্র হয়ে যেতে পারে। বালোচিস্তানের উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে রয়েছে।”

   

জ্যোতির্ময় মাহাতোর এই মন্তব্য শুধু ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে তাই নয়, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, এই ধরনের মন্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

তৃণমূলকে নিশানা, ‘সিঁদুর বিক্রি’ মন্তব্যে পাল্টা জবাব
সম্প্রতি তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ মন্তব্য করেন, “প্রধানমন্ত্রী আগে চা বিক্রি করতেন, এখন সিঁদুর বিক্রি করছেন।” এই বক্তব্যের জবাবে মাহাতো কড়া ভাষায় বলেন, “উদয়ন গুহ একবার ফরোয়ার্ড ব্লক, একবার সিপিএম, কখনও অন্য দলে—এই ধরণের নেতাদের কথার কোনও গুরুত্ব নেই। তবে জানতে হবে, তৃণমূলের শীর্ষনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলছেন। যদি এই বক্তব্য দলীয় অবস্থান হয়, তাহলে আমরা জবাব দিতে বাধ্য হব।”

তিনি আরও বলেন, “তৃণমূল আজ দ্বিচারিতা করছে। তারা নিজেরাও জানে না দলের মধ্যে কে কী বলছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করুন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের সঙ্গে এই মন্তব্য খাপ খায় কিনা।”

চাকরি দুর্নীতি ও বঞ্চনার অভিযোগ
হাজরা মোড়ে চাকরি হারানো প্রার্থীদের বিক্ষোভ ও গ্রেফতারির প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ বলেন, “এই সরকার প্রথম থেকেই প্রতারণা করছে। পরীক্ষা নিয়ে চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে ছলচাতুরি করেছে। যারা টাকা দিয়েছে, তারা চাকরি পেয়েছে। যোগ্যরা আজও বঞ্চিত। এসএসসি-র হাতে কোড বলেছিল তালিকা তৈরি করতে, কিন্তু তৃণমূল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তা করেনি। কারণ, এতে তাদের দলের বড়-বড় নেতারা জড়িয়ে পড়ে। এখন যেমন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে, তেমন বহু নেতা জড়িয়ে পড়বে বলে এই সরকার গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে।”

Advertisements

মাহাতোর মতে, এই দুর্নীতির শিকার হয়েছেন সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা। “যারা সত্যিই চাকরির যোগ্য ছিল, তাদের বলি দিয়েছে এই সরকার,” বলেন তিনি।

সিভিক ভলেন্টিয়ার দুর্নীতিতেও তোপ
রানীগঞ্জে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের ঘুষ আদায়ের অভিযোগে বিজেপি সাংসদ আরও বলেন, “এটা কোনও নতুন ঘটনা নয়। প্রতিটি থানায় কিছু লোক বসে থাকে, যারা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ভলেন্টিয়ারদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে। সেই টাকা পাঠাতে হয় কালীঘাটে। না হলে চাকরি থাকবে না। এটা একপ্রকার মাসুল আদায়ের ব্যবস্থা।”

এই মন্তব্যের মাধ্যমে তৃণমূলের গড়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ বহুদিন ধরেই বিজেপি করে আসছে, সেই বক্তব্য আরও একবার সামনে এল। সিভিক ভলেন্টিয়ারদের পেশাগত নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মাহাতো।

রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
জ্যোতির্ময় মাহাতোর এই বিস্ফোরক মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানকে নাড়িয়ে দিতে পারে।
এদিকে, বিজেপির একাংশ মনে করছে, জ্যোতির্ময় মাহাতোর বক্তব্য আসন্ন রাজনৈতিক লড়াইয়ের একটি প্রস্তুতি। যেখানে তৃণমূলকে দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার মুখরূপে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি। এখন দেখার বিষয়, তৃণমূল কংগ্রেস বা কেন্দ্র সরকার এই মন্তব্যের পর কী অবস্থান নেয়।

বাংলার রাজনীতি উত্তপ্ত, আর জ্যোতির্ময় মাহাতোর মন্তব্য সেই উত্তাপকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল।