চীন (china) জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এই ঘটনার “দ্রুত ও ন্যায্য তদন্ত” করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে, চীন (china) তার দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেছে যে, ভারতের সঙ্গে ইসলামাবাদের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষায় বেইজিং তাদের পাশে থাকবে। চীনের (china) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই রবিবার পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেন। এই তথ্য জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া।
ইসহাক দার ওয়াং ই-কে, যিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য, কাশ্মীর অঞ্চলে সাম্প্রতিক সন্তাসবাদী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনার বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত করেন।
সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে (china)
সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াং ই এই পরিস্থিতির উপর নিবিড় নজর রাখছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে বিশ্বের একটি সাধারণ দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় চীনের অবিচল সমর্থনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
গত ২৩ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া এই জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। চীন এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয়।” চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন একটি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
সীমান্তে কাঁটাতার নয়, কাঁটা পড়ল মায়ের কোলেও, ভিসা বাতিলেই মাকে ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরল দুই ভাই-বোন
ওয়াং ই জানান
ওয়াং ই আরও জানান, চীন (china) এই ঘটনার দ্রুত এবং নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষে এবং বিশ্বাস করে যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত কোনো পক্ষের মৌলিক স্বার্থের পক্ষে নয়। এটি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও ক্ষতিকর। তিনি উভয় পক্ষকে সংযমী হতে, গঠনমূলকভাবে আলোচনায় অংশ নিতে এবং উত্তেজনা কমাতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
ইসহাক দার কি বলেছেন
ইসহাক দার পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান পরিস্থিতি পরিপক্কভাবে মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং চীন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন এবং এমন কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে।
চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে, যাকে প্রায়শই “সর্বকালের মিত্রতা” হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এই সম্পর্ক চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) এর মতো বৃহৎ পরিকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে আরও জোরদার হয়েছে।
তবে, পহেলগাঁও হামলার পর চীনের (china) এই অবস্থান ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যুতে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা রয়েছে, এবং এই হামলা সেই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সমাজ মাদ্ধমে প্রতিক্রিয়া
এক্স-এ পোস্ট করা বেশ কিছু বার্তায় দেখা গেছে, চীনের (china) এই অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, চীন পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাতমূলক অবস্থান নিয়েছে, আবার কেউ বলছেন, চীন নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের একজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সজীব শ্রীবাস্তব বলেছেন, “বিশ্ব আজ ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে দাবি করা চীনও পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করেছে এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছে।”
তবে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর বক্তব্যে স্পষ্ট যে বেইজিং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা স্বার্থের প্রতি তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই একটি বৈশ্বিক দায়িত্ব। চীন পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় সবসময় সমর্থন দিয়ে আসছে।”
রাজনীতিতে নতুন জটিলতা
এই ঘটনা আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন জটিলতা যোগ করেছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চীনের এই আহ্বান এবং পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন কীভাবে এই পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করবে, তা ভবিষ্যতের ঘটনাপ্রবাহের উপর নির্ভর করছে। বিশ্লেষকদের মতে, চীন একদিকে নিরপেক্ষতার ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে তার কৌশলগত মিত্র পাকিস্তানের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখছে।