লালমনিরহাটে চিনের সহায়তা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ‘চিকেন’স নেক’ এর

বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে অবস্থিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি পুনরুদ্ধারের জন্য চীনের (china) সহায়তার পরিকল্পনা ভারতীয় প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই বিমানঘাঁটিটি ভারত-বাংলাদেশ…

china supports bangladesh

বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে অবস্থিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি পুনরুদ্ধারের জন্য চীনের (china) সহায়তার পরিকল্পনা ভারতীয় প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই বিমানঘাঁটিটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযোগকারী ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত শিলিগুড়ি করিডরের অত্যন্ত কাছে।

এই করিডর, যা ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত, ভারতের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূ-কৌশলগত অঞ্চল। চীন যদি এই বিমানঘাঁটির সংস্কারে অর্থায়ন করে, তবে এটি চীনা (china) সামরিক সম্পদ—যেমন যুদ্ধবিমান, রাডার, এবং নজরদারি সরঞ্জাম—মোতায়েনের পথ প্রশস্ত করতে পারে, যা ভারতের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে। এই উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে ভারত ত্রিপুরার উত্তরাঞ্চলের কৈলাসহারে তিন দশকের পুরোনো একটি বেসামরিক বিমানবন্দর পুনরুদ্ধারের কাজ দ্রুত শুরু করেছে।

   

শিলিগুড়ি করিডরের কৌশলগত গুরুত্ব

শিলিগুড়ি করিডর, যা ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্য—অসম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং সিকিম—কে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত সংকীর্ণ ভূখণ্ডটি ভারতের সামরিক ও বেসামরিক যোগাযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু।

এটি পশ্চিমে নেপাল, উত্তরে ভূটান এবং দক্ষিণে বাংলাদেশ দ্বারা সীমান্তবেষ্টিত। নেপাল ও ভূটানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্থিতিশীল হলেও, বাংলাদেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন এই অঞ্চলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। লালমনিরহাট বিমানঘাঁটির পুনরুদ্ধার, বিশেষ করে চীনের সম্ভাব্য সামরিক জড়িত থাকার কারণে, ভারতের জন্য একটি গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন ও চীনের ভূমিকা

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। শেখ হাসিনা ভারতের একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হতেন এবং চীনের উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখতেন।

তবে, তাঁর সরকারের পতনের পর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করেনি এবং চীন (china)ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ‘ভূ-বেষ্টিত’ বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলের ‘সমুদ্রের প্রহরী’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যা ভারতের কৌশলগত উদ্বেগকে আরও বাড়িয়েছে।

লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি, যা ১৯৩১ সালে ব্রিটিশদের দ্বারা নির্মিত এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত ছিল। ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার এই ঘাঁটির একটি অংশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড এয়ারোস্পেস ইউনিভার্সিটি স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যা বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অধীনে কার্যকর।

তবে, ইউনূস সরকার ছয়টি ব্রিটিশ-যুগের বিমানবন্দর, যার মধ্যে লালমনিরহাট অন্তর্ভুক্ত, পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। চীনা কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক সফর এবং পাকিস্তানি একটি কোম্পানির সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া: কৈলাসহার বিমানবন্দর পুনরুদ্ধার

লালমনিরহাটের উন্নয়নের জবাবে ভারত ত্রিপুরার কৈলাসহারে ১৯৯০-এর দশকে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি বেসামরিক বিমানবন্দর পুনরুদ্ধারের কাজ দ্রুত শুরু করেছে। এই বিমানবন্দরটি মূলত বেসামরিক ব্যবহারের জন্য পুনরুদ্ধার করা হলেও, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য প্রধান বিমানবন্দরের মতো এটিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য বিমানের জন্য টেক-অফ, অবতরণ এবং জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা উন্নত করা হবে(china)। এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র বাংলাদেশের লালমনিরহাট পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনার সময়ে ভারতের কৌশলগত অবস্থানের একটি উদাহরণ।

২০২৫ সালের ২৬ মে ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের (এএআই) একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল কৈলাসহার বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করে এর বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করে। দলটি সাংবাদিকদের জানায়, “রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পরিকল্পনা করা হবে।”

Advertisements

এই বিমানবন্দরটি পুনরুদ্ধার ত্রিপুরায় বিমান সংযোগ উন্নত করার পাশাপাশি এই অঞ্চলের কৌশলগত নিরাপত্তা বাড়াবে। বর্তমানে ত্রিপুরার একমাত্র প্রধান বিমানবন্দর রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত, এবং কৈলাসহারের পুনরুদ্ধার এই রাজ্যের সংযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে।

6720mAh ব্যাটারি ও 50MP OIS ক্যামেরা সহ আসছে Motorola-র দুটি শক্তিশালী ফোন

কৈলাসহারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব

কৈলাসহার বিমানবন্দর ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই বিমানবন্দর থেকে ‘কিলো ফ্লাইট’ নামে পরিচিত বাংলাদেশের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একটি হিট-অ্যান্ড-রান স্ট্রাইক গ্রুপ পরিচালিত হতো, যা ভারতীয় বিমানবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কাজ করত। এই দলে কানাডিয়ান তৈরি ডিএইচসি-৩ অটার বিমান, ফরাসি তৈরি আলুয়েট II হেলিকপ্টার এবং মার্কিন তৈরি ডিসি-৩ ডাকোটা বিমান ছিল। এই দলটি পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গঠনের পথপ্রদর্শক হয়।

ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ

লালমনিরহাট বিমানঘাঁটির পুনরুদ্ধার এবং চীনের (china)সম্ভাব্য সামরিক জড়িত থাকা ভারতের জন্য একটি গুরুতর কৌশলগত চ্যালেঞ্জ। এই ঘাঁটি থেকে চীনা যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং নজরদারি সরঞ্জাম মোতায়েন করা হলে, এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সামরিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। এই বিমানঘাঁটি ভারতের আর্টিলারি রেঞ্জের মধ্যে থাকলেও, এর কাছাকাছি অবস্থান ভারতের শিলিগুড়ি করিডরকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের চীন (china)ও পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ভারতের জন্য আরও উদ্বেগের কারণ। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রোগ্রামের অধীনে সামরিক আধুনিকীকরণের জন্য চীনের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান, কামান এবং নৌযান সহ অস্ত্র সরবরাহ পাচ্ছে।

এছাড়া, পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সীমান্ত পরিদর্শন এবং পাকিস্তানি কোম্পানির সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা ভারতের জন্য একটি সমন্বিত চীন-পাকিস্তান কৌশলের ইঙ্গিত দেয়।

লালমনিরহাট বিমানঘাঁটির পুনরুদ্ধারে চীনের (china)সম্ভাব্য জড়িত থাকা এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ভারত-বিরোধী অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতাকে জটিল করে তুলেছে। ভারতের কৈলাসহার বিমানবন্দর পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ এই হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসেবে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার একটি প্রচেষ্টা।

তবে, এই পরিস্থিতি ভারতের কূটনৈতিক এবং সামরিক প্রস্তুতির পরীক্ষা নেবে(china)। আগামী দিনে লালমনিরহাট এবং শিলিগুড়ি করিডরের চারপাশের উন্নয়ন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।