পুলিশকে সহায়তায় ছত্তিশগড়ে নকশালদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড

ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) নকশাল প্রভাবিত বিজাপুর জেলায় নকশালরা ফের তাদের নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে। রবিবার (২২ জুন) নকশালরা দুই নিরীহ গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যার মধ্যে একজন…

Chhattisgarh naxal brutality

ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) নকশাল প্রভাবিত বিজাপুর জেলায় নকশালরা ফের তাদের নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে। রবিবার (২২ জুন) নকশালরা দুই নিরীহ গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যার মধ্যে একজন ছিলেন আত্মসমর্পণকারী প্রাক্তন নকশাল। এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, এবং নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে নকশালদের হাতে পাঁচজনের প্রাণহানির ঘটনায় রাজ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিজাপুর (Chhattisgarh) জেলার একটি গ্রামে নকশালরা শনিবার রাতে হানা দেয় এবং দুই গ্রামবাসীকে অপহরণ করে জঙ্গলে নিয়ে যায়। এরপর তাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে একজন প্রাক্তন নকশাল, যিনি সম্প্রতি আত্মসমর্পণ করে সাধারণ জীবনে ফিরে এসেছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নকশালরা তাকে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতার সন্দেহে টার্গেট করেছিল। দ্বিতীয় গ্রামবাসীকে নকশালদের বিরুদ্ধে গ্রামে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

   

এই হত্যাকাণ্ডের পর নকশালরা গ্রামে হুমকি দিয়ে গেছে যে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করলে আরও কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে। ঘটনার পর থেকে গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে, এবং অনেক গ্রামবাসী নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া (Chhattisgarh)

ঘটনার খবর পাওয়ার পরই বিজাপুর (Chhattisgarh) পুলিশ, জেলা রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি), এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) একটি যৌথ তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। নকশালদের ঘাঁটি সন্দেহে বিজাপুরের ঘন জঙ্গল এবং আশপাশের এলাকায় ড্রোন ও হেলিকপ্টারের সাহায্যে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বস্তর রেঞ্জের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) পি. সুন্দররাজ জানিয়েছেন, “নকশালদের এই কাপুরুষোচিত কাজের জবাব দেওয়া হবে। আমাদের বাহিনী অপরাধীদের ধরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে নকশালদের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ থাকতে পারে। গত কয়েক মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে একাধিক নকশাল নেতার মৃত্যু এবং শতাধিক নকশালের আত্মসমর্পণ নকশালদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। ফলে তারা গ্রামবাসীদের উপর আক্রমণ করে তাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।

নকশালদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান

ছত্তিশগড়ে (Chhattisgarh) নকশালদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান গত কয়েক বছরে তীব্রতর হয়েছে। কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন যে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে ছত্তিশগড়কে নকশালমুক্ত করা হবে। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য বস্তর অঞ্চলে প্রায় ৪,০০০ অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন সংঘর্ষে ১০০-এর বেশি নকশাল নিহত হয়েছে, এবং শতাধিক নকশাল গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণ করেছে।

এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিজাপুরে একটি বড় অভিযানে ৩১ জন নকশাল নিহত হয়েছিল, যা ছিল ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ । এছাড়া, মে মাসে তেলঙ্গানা সীমান্তবর্তী কার্গুট্টা পাহাড়ে ‘অপারেশন সংকল্প’-এ ৩১ জন নকশাল নিহত হয়। এই অভিযানগুলো নকশালদের কোমর ভেঙে দিয়েছে, তবে তারা এখনও গ্রামবাসীদের টার্গেট করে তাদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে।

গ্রামবাসীদের উপর নকশালদের অত্যাচার

নকশালরা প্রায়ই গ্রামবাসীদের পুলিশের চর সন্দেহে হত্যা করে। গত ১৭ জুন বিজাপুরে তিনজন গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল, এবং এই সপ্তাহে মোট পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই ঘটনাগুলো নকশালদের ক্রমবর্ধমান হতাশা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চাপের ফল বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Advertisements

গ্রামবাসীরা এখন দুই দিক থেকে চাপের মুখে রয়েছেন। একদিকে নকশালদের ভয়, অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি অভিযান। অনেক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, তারা নিরপেক্ষ থাকতে চান, কিন্তু উভয় পক্ষের চাপে তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেব সায় এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং নকশালদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “নকশালরা তাদের শেষ দিন গুনছে। আমরা বস্তরকে শান্তিপূর্ণ ও নকশালমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

“সময়ই দেবে উত্তর”— কোন ইস্যুতে চুপ থাকলেন কল্যাণ?

বিরোধী দল কংগ্রেসও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছে, তবে তারা রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বাঘেল বলেছেন, “নকশালদের বিরুদ্ধে শুধু সামরিক অভিযান নয়, গ্রামীণ উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের সমর্থন কমানো দরকার।”

ছত্তিশগড়ে (Chhattisgarh) নকশালদের এই রক্তাক্ত হামলা রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতাকে তুলে ধরেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযান নকশালদের দুর্বল করলেও, গ্রামবাসীদের উপর তাদের আক্রমণ এখনও চলছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুধু সামরিক শক্তি নয়, গ্রামীণ উন্নয়ন, শিক্ষা, এবং আত্মসমর্পণকারী নকশালদের পুনর্বাসনের মতো ব্যাপক কৌশল প্রয়োজন। বিজাপুরের এই ঘটনা ছত্তিশগড়কে নকশালমুক্ত করার লড়াইয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, এবং সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর এখন আরও দায়িত্ব বেড়েছে।