ছত্তিশগড়ে মূলস্রোতে ফিরল ২০০ র বেশি নকশাল

chhattisgarh-naxal-surrender-2025-mainstream-rehabilitation

রায়পুর: ছত্তিশগড়ে এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজ্য প্রশাসন। শুক্রবার রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ২০০-রও বেশি নকশাল জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে মূলস্রোতে ফিরে এলেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এদিন আত্মসমর্পণকারীদের আনুষ্ঠানিকভাবে সমাজের মূলধারায় স্বাগত জানানো হয়েছে এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

Advertisements

রাজ্যের আইজি সুন্দররাজ পি. জানান, “আজ যে নকশালরা আত্মসমর্পণ করেছেন, তাঁরা বছরের পর বছর ধরে পাহাড় ও জঙ্গলে বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাচ্ছিলেন। সরকারের উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা ও সমাজের পরিবর্তিত চিত্র দেখে তাঁরা এখন মূলধারায় ফিরতে আগ্রহী।”

এই বিশাল আত্মসমর্পণ অভিযানের নেতৃত্বে ছিল দান্তেওয়াড়া ও বিজাপুর জেলার নিরাপত্তা বাহিনী। বেশিরভাগ নকশালই এই দুই এলাকা থেকে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মহিলা সদস্য, কিশোর বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য এবং স্থানীয় দলীয় নেতারাও।

সন্ত্রাসবাদ দমন বাহিনীর এক কর্তা জানান, “এই ঘটনা ছত্তিশগড়ে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। গত এক দশকে এত বড় সংখ্যায় আত্মসমর্পণ আর হয়নি।” সরকারের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণকারীদের নগদ আর্থিক সাহায্য, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

নকশাল আন্দোলনের ইতিহাসে এমন উদাহরণ বিরল, যেখানে একসঙ্গে এত বড় সংখ্যক গোষ্ঠী অস্ত্র নামিয়ে সমাজে ফিরেছে। এই সাফল্য মূলত সরকারের “লোন ভার্রাটু (Come Back Home)” অভিযানের ফল, যা ২০২০ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নকশালদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।

Advertisements

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নকশাল প্রভাবিত এলাকায় উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। রাস্তা, স্কুল, হাসপাতাল এবং মোবাইল সংযোগ পৌঁছে যাওয়ায় বহু তরুণ এখন আর বনের পথে নয়, বরং মূলস্রোতে যোগ দিতে আগ্রহী।

তবে প্রশাসনের উদ্বেগ রয়ে গেছে আত্মসমর্পণ করলেও এখনও জঙ্গলে সক্রিয় রয়েছে কিছু কট্টর গোষ্ঠী। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও মানবিক ও উন্নয়নমুখী পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও এদিন প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “এই আত্মসমর্পণ শুধু বন্দুক নামানো নয়, বরং শান্তি ও উন্নয়নের পথে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।” ছত্তিশগড় প্রশাসন এখন তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ও সামাজিক মেলবন্ধনে যুক্ত করা হবে। সরকারের আশা এভাবে ধীরে ধীরে নকশালবাদের প্রভাব শেষ হবে।