দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’ (Ayushman Bharat) । এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দেশের ১০ কোটিরও বেশি গরিব পরিবারকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া। তবে বাস্তবে, অনেক রাজ্যে এই পরিষেবা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। বিশেষ করে ছত্তিশগড়ে ছবিটা আরও উদ্বেগজনক।
বর্তমানে ছত্তিশগড়ে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ (Ayushman Bharat) প্রকল্পের আওতায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা বকেয়া। সময়মতো এই বকেয়া অর্থ পরিশোধ না হওয়ায়, বহু হাসপাতাল এখন রোগীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ চাইতে শুরু করেছে। যার ফলে ‘বিনামূল্যে চিকিৎসা’র যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
রোগীদের চরম ভোগান্তি
এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত বহু দরিদ্র পরিবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে এখন বলা হচ্ছে, “আপনাদের আয়ুষ্মান কার্ড(Ayushman Bharat) গ্রহণযোগ্য নয়, নগদ দিতে হবে।” এমনকি কেউ কেউ জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও পরিষেবা পাচ্ছেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিল জমা পড়ে থাকলেও তা মেটানো হচ্ছে না। ফলে পরিষেবা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বেসরকারি হাসপাতালগুলির হুঁশিয়ারি
ছত্তিশগড়ের অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর ‘আয়ুষ্মান ভারত’ (Ayushman Bharat) প্রকল্পে পরিষেবা দেবে না। কারণ বকেয়া পাওনা আদায়ে কোনও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। আর্থিক চাপের মুখে পড়ে তাদের পরিষেবা চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপোড়েন
এই পরিস্থিতির পেছনে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও দায়ী বলে মনে করছেন অনেকে। রাজ্য সরকার বারবার কেন্দ্রকে তাগাদা দিলেও বরাদ্দ অর্থ আসছে না। আবার কেন্দ্র বলছে, প্রয়োজনীয় নথিপত্র বা যাচাইয়ের ঘাটতির কারণে বিল আটকে আছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ শুধু একটি নামমাত্র প্রকল্পে পরিণত হবে। যদি সময়মতো অর্থ ছাড় না হয়, তাহলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী চিকিৎসার বাইরে চলে যাবে, যা সামাজিক ও মানবিক দিক থেকে গভীর সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
‘আয়ুষ্মান ভারত’(Ayushman Bharat) প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল চিকিৎসা সবার নাগালে আনা। কিন্তু ছত্তিশগড়ের বাস্তব চিত্র বলছে, সেই স্বপ্ন এখন ভেন্টিলেশনে। সরকারের উচিত অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়ে বকেয়া পরিশোধ নিশ্চিত করা এবং সাধারণ মানুষের চিকিৎসার অধিকার রক্ষা করা।