ওয়াকফ বোর্ড নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ‘পার্টি সিদ্ধান্ত’ ফাঁস নাড্ডার

ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)-র সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা (JP Nadda) রবিবার বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করার কোনও উদ্দেশ্য নেই। তিনি জানান, সরকার শুধুমাত্র…

JP Nadda Waqf statement

ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)-র সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা (JP Nadda) রবিবার বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করার কোনও উদ্দেশ্য নেই। তিনি জানান, সরকার শুধুমাত্র এটি নিশ্চিত করতে চায় যে, ওয়াকফ বোর্ডের কার্যক্রম আইনের মধ্যে থেকে পরিচালিত হয়। সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধী দলগুলো এই বিলকে ‘সংবিধানবিরোধী’ বলে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। শুক্রবার এই বিল রাজ্যসভায় পাস হয়, এবং পরের দিন শনিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এটির অনুমোদন দিয়ে পূর্ণাঙ্গ আইনে পরিণত করেছেন।

বিল পাসের পর কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি, রাঁচি এবং লখনউ-এর মতো শহরে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা ‘আমরা ওয়াকফ বিল প্রত্যাখ্যান করছি’ স্লোগান দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে দলের সদর দপ্তরে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে নাড্ডা তাঁর বক্তব্যে এই বিতর্কের জবাব দেন।

   

নাড্ডা বলেন, “আমরা ওয়াকফ বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। আমাদের লক্ষ্য শুধু এটুকুই যে, যারা এটি পরিচালনা করছে, তারা আইনের সীমার মধ্যে থেকে এবং প্রতিষ্ঠিত নিয়ম মেনে কাজ করুক। ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তি এবং তহবিল মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ব্যবহার হওয়া উচিত।” তিনি তুরস্ক সরকার এবং অন্যান্য দেশের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে ওয়াকফ সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। তবে ভারত সরকার শুধু নিয়ম মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে। “আমরা কেবল বলছি, নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে হবে,” বলেন নাড্ডা।

ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের উদ্দেশ্য

ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের মূল লক্ষ্য হল ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা। এই বিল পূর্ববর্তী আইনে দেখা ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে চায়। এর মধ্যে রয়েছে আইনের নাম পরিবর্তন, ওয়াকফ বোর্ডের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদান, নিবন্ধন প্রক্রিয়ার উন্নতি এবং প্রযুক্তির সাহায্যে ওয়াকফ রেকর্ডের উন্নয়ন। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির স্বচ্ছতা এবং দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়।

‘ওয়াকফ’ শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ ‘ওয়াকুফা’ থেকে, যার অর্থ ‘আটকে রাখা’ বা ‘বেঁধে রাখা’। ইসলামী আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ বলতে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পত্তি ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করাকে বোঝায়। ভারতে ওয়াকফ বোর্ড এই সম্পত্তিগুলো পরিচালনা করে এবং এর তহবিল সম্প্রদায়ের উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়।

বিরোধীদের অভিযোগ

বিরোধী দলগুলো, যেমন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টি, এই বিলকে ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ’ বলে অভিযোগ করেছে। তাঁদের দাবি, এই আইন ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু অধিকার লঙ্ঘন করে। বিরোধী নেতারা বলছেন, বিলে সরকারকে ওয়াকফ সম্পত্তির তদন্ত ও নিয়ন্ত্রণের বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা সংবিধানের ২৫ ও ২৬ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তৃণমূল নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলকে ‘মুসলিম বিরোধী’ বলে সমালোচনা করেছেন।

কলকাতায় শনিবার এই বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, “এই আইন ওয়াকফ বোর্ডের স্বাধীনতা কেড়ে নেবে এবং সরকারের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করবে।” অনেকে এটিকে বিজেপির ‘ধর্মীয় মেরুকরণের কৌশল’ হিসেবেও দেখছেন।

Advertisements

নাড্ডার ব্যাখ্যা

নাড্ডা এই অভিযোগের জবাবে বলেন, “আমরা ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। আমাদের উদ্দেশ্য হল এটি নিশ্চিত করা যে, এই সম্পত্তি এবং তহবিল সম্প্রদায়ের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়।” তিনি তুরস্কের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে সরকার ওয়াকফ সম্পত্তি নিজের হাতে নিয়েছে, কিন্তু ভারত সরকার কেবল আইনি কাঠামোর মধ্যে কাজ করতে বলছে।

নাড্ডা আরও জানান, এই বিলের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির ভুল ব্যবহার এবং দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, “আমরা চাই ওয়াকফ বোর্ড স্বচ্ছভাবে কাজ করুক এবং এর সুবিধা সঠিক জায়গায় পৌঁছাক।”

  1. বিলের প্রধান বৈশিষ্ট্য
  2. ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
  3. ওয়াকফ সম্পত্তির জন্য ডিজিটাল রেকর্ড তৈরি।
  4. নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা।
  5. সরকারি তদন্তের ক্ষমতা বৃদ্ধি।
  6. ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি।
  7. বিরোধীরা বিশেষ করে শেষ বিন্দুটির বিরোধিতা করছে। তাঁদের দাবি, এটি ধর্মীয় সংগঠনের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ।

ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল নিয়ে বিতর্ক আপাতত থামার কোনও লক্ষণ নেই। নাড্ডার বক্তব্য সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করলেও, বিরোধীদের প্রতিবাদ এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ এই আইনের বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। আগামী দিনে এই আইন কীভাবে প্রয়োগ হয় এবং এর প্রভাব কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।