ভারতের রাজনীতিতে একে অপরের প্রতি আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে সম্প্রতি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে (Rahul Gandhi) কেন্দ্র করে এক নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সংসদীয় অধিবেশনের সময় এক কিছু মন্তব্যের জন্য তাকে কেন্দ্র করে সিবিআই (CBI) তদন্ত শুরু করার খবর সামনে এসেছে। এই তদন্তের সূত্রপাত তীব্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগের কারণে।
রাহুল গান্ধী, ভারতের কংগ্রেস পার্টির সভাপতি তথা সাংসদ, গত কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নানান ধরনের সমালোচনা করছেন। বিশেষ করে, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে তীব্র মন্তব্য করেছেন। তার অভিযোগ, সরকারের নীতির কারণে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের উপর আঘাত আসছে। সংসদের বিভিন্ন অধিবেশনে রাহুল গান্ধী সরকারকে একাধিক বার চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে একাধিক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সিবিআই তদন্তের সূত্রপাত সেই সময়ে, যখন রাহুল গান্ধী সংসদে তার ভাষণে কিছু মন্তব্য করেছিলেন, যা সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিশেষত, কিছু ক্ষেত্রে তার মন্তব্যগুলোকে অযাচিত এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা হিসেবে দেখানো হয়েছে। সিবিআই এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও কংগ্রেস নেতা তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন, তবুও সরকার এবং তার সমর্থকরা মনে করছেন, রাহুল গান্ধীর ভাষণ দেশবিরোধী শক্তিকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা।
এদিকে, কংগ্রেসের তরফে এই তদন্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা এবং অন্যান্য সদস্যরা বলছেন, ‘‘এটি শুধুমাত্র বিজেপি সরকারের একটি ষড়যন্ত্র, যা আমাদের দলের বিরুদ্ধে।’’ তারা মনে করেন যে, রাহুল গান্ধীকে নিশানা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরিয়ে নেওয়া, যাতে সরকারের বিভিন্ন নীতি বা ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা না হয়।
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের ঘটনাটি কেবল রাজনৈতিক মহলে নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই তদন্তকে স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এমনকি সংসদীয় ভাষণের মধ্যে কোনো ধরনের শঙ্কিত বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য থাকলেও তা একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, যেখানে প্রত্যেক সদস্যকে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে।
এখন, সিবিআই তদন্তের ফল কী হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে, এটি স্পষ্ট যে, ভারতীয় রাজনীতিতে এই ধরনের তদন্তের ঘটনাগুলো অনেক সময় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে। সব মিলিয়ে, রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, এবং তাদের এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরো কৌশলী হতে হবে।