বাজেট পেশ করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। বাজেট পেশের সময়ই তিনি জানিয়েছেন, ভারতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে, অন্তর্বর্তী বাজেটে গরিব, মহিলা, যুব ও অন্নদাতাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল। আর এবার নজর দেওয়া হয়েছে কর্মসংস্থান, এমএসএমই ও মধ্যবিত্তদের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।
বাজেটে ইতিমধ্যেই এমএসএমই-র জন্য বিশেষ স্কিম, বিহার ও অন্ধ্রের জন্য বিশেষ ঘোষণা করেছেন তিনি। বাজেটে রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের জন্যও বিশেষ ঘোষণা। এছাড়াও বলা হয়েছে যে, ৫০০ সংস্থায় ইন্টার্নশিপের বিশেষ সুযোগ পাবেন ১ কোটি পড়ুয়া, আবাস যোজনায় বাড়ি বানাতে ১০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ। একনজরে নির্মলা সীতারামনের বাজেট ঘোষণা-
বিশ্ব জুড়ে মূল্যবৃদ্ধি
‘রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিপিংয়র সমস্যার জেরে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। সেখানেই ভারতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগোচ্ছে। ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধি হয়েছে। এবারের বাজেটে এবার বাজেটে ৯টি বিষয়ে ফোকাস করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।’
চাকরিজীবীদের জন্য বড় ঘোষণা
প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজে তিনটি স্কিম আনা হচ্ছে কর্মসংস্থানের জন্য। সেখানে দেওয়া হবে ইনসেনটিভ। ইপিএফও-র ওপর নজর দেওয়ার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হবে তাঁদের জন্য যাঁরা প্রথম চাকরি করছেন। নতুন চাকরিতে যোগ দিলে সব কর্মীকে এক মাসের বেতন দেওয়া হবে। তিনটি ইন্সটলমেন্টে দেওয়া হবে ওই বেতন। বহু চাকরিজীবী এতে উপকৃত হবেন।
ইনসেনটিভ দেওয়ার ঘোষণা নির্মলার
ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে প্রথম চাকরি পেলে ইনসেনটিভ দেওয়া হবে। ইপিএফও-র সঙ্গেই টাকা দেওয়া হবে কর্মী ও সংস্থাকে। অতিরিক্ত নিয়োগ হলে সরকার প্রতি ৩০০০ টাকা করে প্রতি মাসে দেবে ইপিএফও-র সঙ্গে। ৫০ লক্ষ কর্মী এতে উপকৃত হবেন।
পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ ঘোষণা
পূর্বের রাজ্যগুলির উন্নতির জন্য বিশেষ স্কিমের কথা বললেন নির্মলা। সেই রাজ্যগুলির মধ্যে থাকবে বিহার, অন্ধ্র প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ। কলকাতা বিজনেস করিডরের কথাও উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
বিহার ও অন্ধ্রের জন্য বিশেষ ঘোষণা
বিহারের জন্য বিমানবন্দর তৈরির কথা ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া ১৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হবে অন্ধ্রপ্রদেশকে। অন্ধ্রপ্রদেশের সড়ক পরিবহন পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য এবং শিল্প স্থাপনের জন্য আর্থিক সাহায্যের কথা উল্লেখ বাজেটে। জল, বিদ্যুৎ, রাস্তা ও রেলের উন্নতির জন্য অন্ধ্রকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্যাকেজ।
এমএসএমই-র জন্য বিশেষ স্কিম
এমএসএমই-র দিকে এবার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে মোদী সরকার। আনা হচ্ছে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম, যাতে মেশিন কেনার জন্য লোন নেওয়া যাবে। প্রত্যেক আবেদনকারীকে দেওয়া হবে গ্যারান্টি ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত গ্যারান্টি ফি। মুদ্রা লোন বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হল।
৫০০ সংস্থায় ইন্টার্নশিপের বিশেষ সুযোগ ১ কোটি পড়ুয়ার
আঞ্চলিক শিল্পীদের তৈরি প্রোডাক্ট বিদেশে বিক্রি করতে ই কমার্স এক্সপোর্ট হাব তৈরি করা হবে পিপিপি মোডে। এক ছাদের তলায় পণ্য বিক্রি ও রফতানি হবে। এছাড়া একটি বিশেষ স্কিম আনা হচ্ছে, যাক অধীনে আগামী ৫ বছরে ৫০০টি বড় সংস্থায় ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাবেন ১ কোটি পড়ুয়া। ১২ মাস বা এক বছর ধরে হাতে-কলমে কাজ শিখতে পারবেন তাঁরা। প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা দেওয়া হবে। সংস্থাগুলি যাতে সিএসআর ফান্ড থেকে ট্রেনিং-এর খরচ বহন করে, সে কথাই বলা হয়েছে বাজেটে।
আবাস যোজনায় বাড়ি বানাতে ১০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ
আবাস যোজনার অধীনে ১ কোটি গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য বাড়ি বানাতে ১০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ। ঋণে দেওয়া হবে ভর্তুকি। এছাড়া জল সরবরাহের জন্য রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্মলা। তিনি আরও বলেন, “স্ট্যাম্প ডিউটি কমাতে হবে রাজ্য সরকারগুলিকে। আর মহিলারা কোনও সম্পত্তি কিনলে সেই খরচ কমাতে হবে আরও।”
সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে পড় পদক্ষেপ
সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে বিশেষ যোজনার কথা উল্লেখ করেছেন নির্মলা সীতারামন। তিনি উল্লেখ করেন, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে ১ কোটি বাড়িতে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনামূল্য পাওয়া যাবে। অন্তর্বর্তী বাজেটেই এ কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই স্কিমে ১.২৮ কোটি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ও ১৪ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে।
নির্মাণে বরাদ্দ ১১১১১১১ কোটি
গত কয়েক বছরে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে। আগামী ৫ বছরেও সেই ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হবে। ১১১১১১১ কোটি টাকা ক্যাপিটাল এক্সপেনিচারে দেওয়া হয়েছে, যা জিডিপির ৩.৪ শতাংশ।
বিহার-অসমের বন্যা রোধে আর্থিক সাহায্য
বিহারে বারবার বন্যা হয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ করা হবে ১১,৫০০ কোটি টাকা। অসমেও ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের জন্য দেওয়া হবে অর্থ সাহায্য। হিমাচল প্রদেশ ও হিমাচল প্রদেশে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণেও সাহায্য করবে সরকার।
পর্যটনেও বিশেষ গুরুত্ব বিহারে
পর্যটনে বিশেষ গুরুত্ব পেল বিহার। বিষ্ণুপাদ ও মহাবোধি মন্দির করিডরের জন্য বিশেষ সাহায্য করবে কেন্দ্রীয় সরকার। তৈরি হবে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরের মতো করিডর। এছাড়া বিহারের রাজগীর, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি হবে। ওডিশার অর্থমন্ত্রীরও উন্নতি হবে।
কোন কোন খাতে কমছে আমদানি শুল্ক
বেশ কিছু ক্ষেত্রে শুল্কে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ, চিকিৎসার সরঞ্জাম, এক্স-রে মেশিন, মোবাইল ফোন, মোবাইল চার্জারে কমানো হচ্ছে শুল্ক। লিথিয়াম, কপার, কোবাল্টের মতো খনিজ পদার্থে তুলে নেওয়া হচ্ছে শুল্ক।
নতুন কর পরিকাঠামো
কর পরিকাঠামোয় বদল। ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতনের ক্ষেত্রে কোনও কর দিতে হবে না। ৩ থেকে ৭ লক্ষ বেতনের ক্ষেত্রে দিতে হবে ৫ শতাংশ কর, বেতন ৭ থেকে ১০ লক্ষ হলে কর দিতে হবে ১০ শতাংশ।
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাবদ এর আগে ৫০ হাজার টাকা বাদ যেত। এবার তা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। পেনশনভোগীদের জন্য এই ছাড়ের হার ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।