অনুপ্রবেশ রুখতে এবার অভিনব পদক্ষেপের পথে মোদী সরকার

bsf-biometric-scanners-bangladesh-border-infiltration-defense

নয়াদিল্লি: সীমান্ত নিরাপত্তায় আরও একধাপ এগোল ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে লাগোয়া আন্তর্জাতিক সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবার প্রযুক্তির সাহায্যে নজরদারি জোরদার করছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। জানা গিয়েছে, মোট ১,০০০টি বায়োমেট্রিক স্ক্যানার বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ইতিমধ্যেই ২৯৬টি স্ক্যানার চালু হয়েছে।

Advertisements

এই স্ক্যানারগুলির মূল লক্ষ্য হল সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা। সূত্র অনুযায়ী, প্রতিটি স্ক্যানারে আঙুলের ছাপ সংগ্রহের পাশাপাশি মুখের পরিচিতি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে। ফলে সীমান্তে ধরা পড়া সন্দেহভাজন অনুপ্রবেশকারীদের পরিচয় মিলিয়ে দেখা যাবে আগেও কেউ একইভাবে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল কি না।

   

অজি সফরে ব্যর্থতার মাঝেও আত্মবিশ্বাসে টগবগ ভারত অধিনায়ক

বিএসএফের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা সীমান্ত এলাকায় একটি সম্পূর্ণ বায়োমেট্রিক নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলছি। এই প্রযুক্তি শুধু বর্তমান অনুপ্রবেশ রোধই করবে না, ভবিষ্যতে কোনও পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনাও কমিয়ে দেবে।” বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ স্থলসীমান্ত প্রায় ৪,০৯৬ কিলোমিটার।

এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং মিজোরাম জুড়ে রয়েছে বিস্তৃত সীমান্ত এলাকা। এই বিপুল সীমান্তে প্রতিদিনই ছোট-বড় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে, যা রুখতে বিএসএফের এই নতুন প্রযুক্তি হতে পারে গেমচেঞ্জার।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, সীমান্ত সুরক্ষাকে এখন “demographic defense mission” হিসেবে দেখা হচ্ছে  অর্থাৎ দেশের জনসংখ্যাগত ভারসাম্য রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই মূল উদ্দেশ্য। অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করতে বায়োমেট্রিক তথ্যভান্ডার একটি স্থায়ী সমাধান দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisements

বিএসএফ সূত্রে আরও জানা গেছে, ২৯৬টি স্ক্যানার ইতিমধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, করিমগঞ্জ, ধুবরি এবং উত্তর ত্রিপুরা সীমান্ত অঞ্চলে বসানো হয়েছে। বাকি স্ক্যানারগুলো ধাপে ধাপে আগামী বছরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে।

এই স্ক্যানারগুলি সরাসরি জাতীয় বায়োমেট্রিক ডাটাবেসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, যা পরে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্ত ও ট্র্যাকিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যাবে। এতে অনুপ্রবেশকারীদের দ্রুত শনাক্ত করা ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া আরও সহজ হবে বলে আশা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ সীমান্ত নিরাপত্তায় ভারতের অন্যতম বড় প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন, “যেভাবে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান দুটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে, সেখানে বায়োমেট্রিক স্ক্যানিং সীমান্তরক্ষায় একটি অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার। এর ফলে শুধু মানুষ নয়, সংশ্লিষ্ট চক্রগুলোকেও শনাক্ত করা যাবে।”

অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলির একাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই বায়োমেট্রিক ডেটা যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও গোপন রাখা কতটা সম্ভব, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। যদিও বিএসএফ জানিয়েছে, সমস্ত তথ্য কঠোরভাবে সুরক্ষিত থাকবে এবং শুধুমাত্র অনুমোদিত সংস্থা এই ডেটা ব্যবহার করতে পারবে।

সব মিলিয়ে, সীমান্তরক্ষায় ভারত এবার প্রযুক্তি নির্ভরতার পথে বড় পদক্ষেপ নিল। বিএসএফের লক্ষ্য একটাই “একবার অনুপ্রবেশকারী, সর্বদা চিহ্নিত।” আর সেই লক্ষ্যে বায়োমেট্রিক স্ক্যানারই হতে চলেছে ভারতের সীমান্ত সুরক্ষার নতুন ঢাল।