তেলেঙ্গানা সরকারের কালেশ্বরম (CBI Investigation) লিফট ইরিগেশন প্রকল্পে কথিত অনিয়মের তদন্ত সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)-এর মুখপাত্র কৃষাঙ্ক তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ রেভান্থ রেড্ডির এই সিদ্ধান্তকে ‘দ্বৈত নীতি’ বলে সমালোচনা করে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেন।
তিনি বলেন, “মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে রেভান্থ রেড্ডি সিবিআই-কে বিজেপির মুখোশধারী সংগঠন বলে সমালোচনা করেছিলেন। দিল্লিতে রাহুল গান্ধী বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলেন, আর এখানে আমরা দেখছি কেসিআর-এর বিরুদ্ধে সিবিআই-কে স্বাগত জানানো হচ্ছে। এই ঘটনা কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে গোপন যোগসাজশ প্রকাশ করেছে।”
এই ঘটনা তেলেঙ্গানার রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডি রবিবার (৩১ আগস্ট) রাতে বিধানসভায় প্রায় ১০ ঘণ্টার ম্যারাথন বিতর্কের পর কালেশ্বরম প্রকল্পে কথিত অনিয়মের তদন্ত সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার ঘোষণা করেন। এই সিদ্ধান্ত তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্যও অপ্রত্যাশিত ছিল, কারণ শনিবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি পিনাকি চন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বাধীন কমিশনের রিপোর্টে কালেশ্বরম প্রকল্পে পরিকল্পনা, নকশা, নির্মাণ, এবং রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাপক অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর) এবং প্রাক্তন সেচ মন্ত্রী টি হরিশ রাও-কে দায়ী করা হয়েছে।
বিআরএস নেতা কেটি রামা রাও (কেটিআর) এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “রাহুল গান্ধী সিবিআই-কে বিজেপির ‘বিরোধী নির্মূল কক্ষ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। অথচ তাঁরই দলের মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডি এখন সিবিআই-এর হাতে কালেশ্বরম মামলা তুলে দিচ্ছেন।
এটি কংগ্রেসের রাজনৈতিক দ্বৈত নীতি।” তিনি দাবি করেন, ঘোষ কমিশনের রিপোর্টটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘কল্পকাহিনী’। বিআরএস এই তদন্তের বিরুদ্ধে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছে।
কালেশ্বরম প্রকল্প, যা গোদাবরী নদীর উপর বিশ্বের বৃহত্তম মাল্টি-স্টেজ লিফট ইরিগেশন প্রকল্প হিসেবে পরিচিত, ২০১৯ সালে বিআরএস সরকারের আমলে সম্পন্ন হয়। প্রায় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পটি ১৩টি জেলায় ১৮০০ কিলোমিটারের খাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেচ ও পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছিল।
কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে মেদিগড্ডা ব্যারেজের একটি পিলার ধসে পড়ায় এবং বন্যার কারণে প্রকল্পটি বিতর্কের মুখে পড়ে। জাতীয় বাঁধ সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (এনডিএসএ) রিপোর্টে পরিকল্পনা, নকশা এবং নির্মাণে ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়।
রেভান্থ রেড্ডি বিধানসভায় বলেন, “এই প্রকল্পে আন্তঃরাজ্য বিষয় এবং কেন্দ্রীয় সংস্থা যেমন ওয়াপকস, পিএফসি এবং আরইসি জড়িত। তাই সিবিআই তদন্তই সঠিক পদক্ষেপ।” তিনি দাবি করেন, বিআরএস সরকার ৮৭,৪৪৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, যার মধ্যে ৪৯,৮৩৫ কোটি টাকা ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। তবে, প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে আরও ৪৭,০০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
বিআরএস নেতা ভেমুলা প্রশান্ত রেড্ডি অভিযোগ করেছেন, রেভান্থ রেড্ডি বিজেপির সঙ্গে মিলে কালেশ্বরম প্রকল্পকে বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছেন। তিনি বলেন, “এটি কেবল দুর্নীতির তদন্ত নয়, তেলেঙ্গানার জীবনরেখা মেদিগড্ডা ব্যারেজকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা।” বিআরএস দাবি করেছে, মেদিগড্ডার মেরামতির জন্য মাত্র ৩৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন, কিন্তু সরকার ১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতির অতিরঞ্জিত দাবি করছে।
বিজেপি নেতা এ মহেশ্বর রেড্ডি বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কালেশ্বরমে দুর্নীতির তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছেন। তিনি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও রিপোর্টে কেসিআর-এর দুর্নীতির স্পষ্ট উল্লেখ না থাকায় প্রশ্ন তুলেছেন।
ক্রিকেট সংস্থার শীর্ষপদে ‘পরিবারতন্ত্র’! সভাপতি হলেন সিন্ধিয়া পরিবারের উত্তরসূরি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রেভান্থ রেড্ডির এই পদক্ষেপ কংগ্রেসকে রাজনৈতিক সুবিধা দিতে পারে, কারণ এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে। তবে, সিবিআই তদন্তের ফলাফল এবং এর রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে আগামী দিনে তেলেঙ্গানার রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে।