উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন (Vice Presidential Election) আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে ওড়িশার প্রধান বিরোধী দল বিজু জনতা দল (বিজেডি) এবং তেলঙ্গানার ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)। এই দুই আঞ্চলিক দলের এই সিদ্ধান্ত জাতীয় রাজনীতিতে তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার নীতির প্রতিফলন।
এই নির্বাচনে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)-এর প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন এবং ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী, প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডির মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। বিজেডি এবং বিআরএস-এর ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত এনডিএ-এর প্রার্থীর জন্য পরোক্ষভাবে সুবিধাজনক হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিজেডি-র সাংসদ সম্বিত পাত্র সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দলের সভাপতি ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক সিনিয়র নেতা এবং রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিজু জনতা দল এনডিএ এবং ইন্ডিয়া জোট থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখছে।
আমাদের পুরো মনোযোগ ওড়িশার উন্নয়ন এবং রাজ্যের ৪.৫ কোটি মানুষের কল্যাণের দিকে।” এই অবস্থান বিজেডি-র দীর্ঘদিনের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে তারা জাতীয় রাজনীতিতে কোনো জোটের প্রতি সরাসরি সমর্থন না দিয়ে আঞ্চলিক স্বার্থের উপর জোর দেয়। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও বিজেডি ভোটদানে বিরত ছিল।
অন্যদিকে, বিআরএস-এর কার্যকরী সভাপতি কে টি রামা রাও জানিয়েছেন, তেলঙ্গানায় সার (ইউরিয়া) ঘাটতির কারণে রাজ্যের কৃষকদের দুর্দশার প্রতিবাদে তারা ভোটদানে বিরত থাকবে। তিনি অভিযোগ করেছেন, কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়ই তেলঙ্গানার এই সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
“কৃষকরা সারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আমরা ভোটে অংশ নেব না,” বলেন রাও। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে NOTA-এর বিকল্প থাকলে তারা তা ব্যবহার করতেন। বিআরএস-এর রাজ্যসভায় চারজন সাংসদ রয়েছে, যদিও তাদের লোকসভায় কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।
এই নির্বাচনটি জগদীপ ধনখড়ের স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগের পর মধ্যবর্তী নির্বাচন হিসেবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৭৮২ জন সাংসদের সমন্বয়ে গঠিত ইলেক্টোরাল কলেজ এই নির্বাচনে ভোট দেবে, যার মধ্যে লোকসভার ৫৪৩ জন এবং রাজ্যসভার ২৩৩ জন নির্বাচিত ও ১২ জন মনোনীত সদস্য রয়েছেন।
ভোট গোপন ব্যালটে এবং একক স্থানান্তরযোগ্য ভোটের (Single Transferable Vote) মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। এনডিএ-র প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন বর্তমানে ৪৩৯ জন সাংসদের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন, যেখানে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডির পক্ষে ৩২৪ জন সাংসদ রয়েছেন। বিজেডি-র সাতজন এবং বিআরএস-এর চারজন সাংসদের ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত এনডিএ-র জয়ের সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেডি এবং বিআরএস-এর এই সিদ্ধান্ত ইন্ডিয়া জোটের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জুয়াল ওরাম বলেছেন, “নবীন পট্টনায়েকের এই সিদ্ধান্ত পরোক্ষভাবে এনডিএ-র প্রার্থীকে সমর্থন করছে।”
কংগ্রেস নেতা ভক্ত চরণ দাস অবশ্য এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, “ভোটদানে বিরত থাকা মানে বিজেপিকে সমর্থন করা। এটি বিজেডি-র জন্য বিজেপি-বিরোধী অবস্থান প্রমাণের একটি সুযোগ ছিল।”
দুবাইতে তিন স্পিনার নিয়ে চক্রব্যূহ রচনা গম্ভীরের? রইল সম্ভাব্য একাদশ
এই নির্বাচনের ফলাফল ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। বিজেডি এবং বিআরএস-এর নিরপেক্ষ অবস্থান তাদের আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষার কৌশল হলেও, এটি জাতীয় রাজনীতিতে এনডিএ-র শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। ভোট গণনা ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শুরু হবে, এবং ফলাফল একই দিনে ঘোষণা করা হবে।