দিল্লি: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) ঝাড়খণ্ডে ইউনিফর্ম সিভিল কোড (UCC) নিয়ে মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম) নেত্রী বৃন্দা কারাট। তিনি শাহকে তীব্র সমালোচনা করে দেশের ‘হেট মিনিস্টার’ বলে আখ্যা দেন। বৃন্দা কারাটের অভিযোগ, অমিত শাহের দেওয়া কথিত ইশতেহার আদতে দেশের আদিবাসীদের সমস্যার সমাধান নয়, বরং এটি বড়ো কর্পোরেট সংস্থাগুলির স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার।
বৃন্দা কারাটের ভাষায়, শাহের বক্তব্য আসলে আদিবাসী জমির অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা। তিনি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “যে জমি কর্পোরেট সংস্থাগুলি দখল করে নিচ্ছে, তা কি প্রকৃত অর্থে গুষ্টেটি বা অনুপ্রবেশ? না এটি মূলত লুটপাটের একটি ছলনামাত্র?”
বৃন্দা আরও বলেন, “বড় বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলি অমিত শাহের নির্বাচনী তহবিলে প্রচুর অর্থ দান করছে। ঝাড়খণ্ডে মাইনিং, খনি সংস্থা ও বিদ্যুৎ প্রকল্পের আড়ালে আদিবাসী ভূমি দখল চলছে। বেশিরভাগ প্রকল্প গুজরাটের সংস্থাগুলির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, এবং এতে ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীরা তাদের জমি হারাচ্ছে।”
আদিবাসী জমির প্রতি কর্পোরেট সংস্থার নজর
কারাটের দাবি অনুযায়ী, ঝাড়খণ্ডের মাইনিং ও খনি শিল্পে কর্পোরেট সংস্থাগুলি প্রভাব বিস্তার করছে। বহু আদিবাসী পরিবার তাদের পূর্বপুরুষের জমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে এবং তাদের পুনর্বাসনের কোনও যথোপযুক্ত পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, কর্পোরেট সংস্থাগুলি কেবলমাত্র ঝাড়খণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করছে এবং তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সমর্থন প্রদান করছে।
ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে বিরোধিতা
ইউসিসি নিয়ে ব্রিন্দা কারাট বলেন, “ইউসিসি আদতে নারীদের অধিকারের জন্য নয়। এর উদ্দেশ্য হলো আরএসএসের সুনির্দিষ্ট একটি এজেন্ডা রূপায়ণ করা। এর মাধ্যমে কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।”
কারাট উদাহরণ হিসেবে বলেন, “উত্তরাখণ্ডে প্রয়োগ হওয়া ইউসিসি ইতিমধ্যেই নারীদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে, যা এই আইন সম্পর্কে প্রকৃত উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে।” তার দাবি, ইউসিসি’র পক্ষে দাঁড়িয়ে নারীদের অধিকার বাড়ানো হবে এই কথা বললেও, এর আসল উদ্দেশ্য দেশের ধর্মীয় বৈচিত্র্যে আঘাত করা।
রাজনৈতিক সমালোচনা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
বৃন্দা কারাটের বক্তব্য অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকারের ইউসিসি বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী হলেও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এর বিরুদ্ধে অবস্থান তৈরি হয়েছে। কারাটের মতে, বর্তমান সরকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের জমি ও অধিকার রক্ষায় কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পরিবর্তে, ক্ষমতাসীন দলের নীতি দেশজুড়ে কর্পোরেটদের স্বার্থ রক্ষা করছে।
ঝাড়খণ্ডের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায় দীর্ঘকাল ধরেই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির ফলে সেখানে কর্পোরেট শোষণ বাড়ছে বলে অভিযোগ। বৃন্দা কারাট বলেন, “কর্পোরেট সংস্থাগুলি ঝাড়খণ্ডের মাটি ও জল সম্পদে প্রবেশ করছে, কিন্তু স্থানীয় জনগণের জন্য তেমন কোনও সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।” তিনি এই অবস্থাকে দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে বলেন, এই প্রবণতা আদিবাসী সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে বিপন্ন করছে।
স্থানীয় রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচন
অমিত শাহের ঝাড়খণ্ড সফর ও তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্যের বিরোধী শিবির ও আদিবাসী সংগঠনগুলি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিরোধীরা দাবি করছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এই অঞ্চলের ভূমি ও সম্পদ কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে সোপর্দ করতে প্রস্তুত, যা স্থানীয় জনগণের জীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে
সার্বিক মূল্যায়ন
বর্তমানে আদিবাসী অধিকার ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ইউসিসি দাঁড়িয়ে আছে। বৃন্দা কারাটের এই মন্তব্য বিজেপির নির্বাচনী প্রস্তুতি ও কেন্দ্রের কর্পোরেট সম্পর্কের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তবে, অমিত শাহ বা বিজেপির পক্ষ থেকে এর কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি।