ভারত জুড়ে জাতীয় নাগরিক প্রতিরক্ষা মহড়া ‘অপারেশন অভ্যাস’-এর অংশ হিসেবে নয়া দিল্লিতে রাত ৮টা থেকে ৮:১৫ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট (blackout) পালন করা হবে। নিউ দিল্লি মিউনিসিপাল কাউন্সিল (এনডিএমসি)-এর এক কর্মকর্তার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন , এই ব্ল্যাকআউট (blackout) মহড়ায় হাসপাতাল, ডিসপেনসারি, রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মেট্রো স্টেশন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।
কর্মকর্তা বলেন, “সকল বাসিন্দাকে এই পরিস্থিতিতে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।” এই মহড়া দিল্লির ৫৫টি স্থানে আজ সকালে পরিচালিত হয়েছে, যেখানে সাইরেনের শব্দ, নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে ছুটে যাওয়া এবং আহতদের স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। এই মহড়ায় বিমান হামলা, একাধিক অগ্নিকাণ্ড এবং উদ্ধার অভিযানের মতো একাধিক প্রতিকূল পরিস্থিতির অনুকরণ করা হয়েছে।
অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষাপটে করা হচ্ছে
এই নিরাপত্তা মহড়া ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষাপটে করা হচ্ছে, যেখানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে নিখুঁত হামলা চালানো হয়। এই অভিযান ২২ এপ্রিলের পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সংকটের মুখে রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছেন এবং রাজ্যবাসীকে “একসঙ্গে লড়াইয়ের” আহ্বান জানিয়েছেন।
দিল্লিতে ব্ল্যাকআউট ও মহড়ার বিবরণ (blackout)
দিল্লির এনডিএমসি এলাকায়, যার মধ্যে কনট প্লেস এবং লুটিয়েন্স জোন অন্তর্ভুক্ত, রাত ৮টা থেকে ১৫ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে (blackout)। এই সময়ে বাসিন্দাদের বৈদ্যুতিক আলো, ইনভার্টার বা মোবাইল টর্চ ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খান মার্কেট এবং চাঁদনি চকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পিসিআর ভ্যান, দমকল বাহিনী এবং নাগরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবকদের মোতায়েন করা হয়েছে। মহড়ার সময় সাইরেন বাজানো, জরুরি উদ্ধার অভিযান এবং অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমের অনুশীলন করা হয়েছে।
SAFF U19 চ্যাম্পিয়নশিপে ঝড় তুলতে পারেন ব্লু কোল্টসের পাঁচ তারকা
অন্যান্য রাজ্যে ব্ল্যাকআউটের সময়সূচি
দিল্লি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ব্ল্যাকআউট (blackout) মহড়া পরিচালিত হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ের বার্ক কলোনি, ত্রোম্বে এবং অনুশক্তি নগরে রাত ৮টা থেকে ব্ল্যাকআউট শুরু হবে, যদিও সময়কাল উল্লেখ করা হয়নি। উত্তর প্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগরে চারটি স্থান—এনটিপিসি দাদরি, সুরজপুরের এলজি কোম্পানি, নয়ডার স্যামসাং কোম্পানি এবং জেওয়ার বিমানবন্দরে ব্ল্যাকআউট পালন করা হবে। লখনউয়ের পুলিশ লাইন্স এলাকায় রাত ৭টা থেকে ব্ল্যাকআউট মহড়া হবে, তবে শহরব্যাপী কোনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা হবে না।
পাঞ্জাবের এসএএস নগর (মোহালি) এবং চণ্ডীগড়ে রাত ৭:৩০ থেকে ৭:৪০ পর্যন্ত ১০ মিনিটের জন্য জেলা এবং শহরব্যাপী ব্ল্যাকআউট হবে। চণ্ডীগড়ে চিকিৎসা সুবিধাগুলো এই মহড়া থেকে মুক্ত থাকবে, তবে জানালায় মোটা পর্দা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফরিদাবাদে রাত ৭:৫০ থেকে ৮টা পর্যন্ত ১০ মিনিটের ব্ল্যাকআউট হবে। পাঞ্জাবের ফিরোজপুর ক্যান্টনমেন্টে রাত ৯টা থেকে ৯:৩০ পর্যন্ত এবং আমৃতসরে রাত ১০টা থেকে ১০:৩০ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট পালন করা হবে। আমৃতসরে উঁচু ভবনগুলোতে উচ্ছেদ মহড়ার পর ব্ল্যাকআউট হবে।
পশ্চিমবঙ্গে মমতার নেতৃত্ব
পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জাতীয় সংকটের মুখে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছেন এবং প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মমতা একটি জনসভায় বলেন, “এটি দেশের জন্য লড়াইয়ের সময়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতের পাশে দাঁড়াবে।” তিনি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো, হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা সুবিধা প্রস্তুত রাখা এবং সম্ভাব্য শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।
জনজীবনে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই মহড়া জনজীবনে সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি করলেও, সরকার জনগণকে শান্ত থাকার এবং গুজব এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। বেঙ্গালুরু, মুম্বই, পাটনা এবং চণ্ডীগড়ের মতো শহরগুলোতেও একই ধরনের মহড়া পরিচালিত হচ্ছে (blackout)। খবর অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে এই ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটিকে গ্রহণযোগ্য বললেও, অনেকে ব্যক্তিগত পরিকল্পনা বাতিলের জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
‘অপারেশন অভ্যাস’ এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষাপটে ভারত জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক প্রতিরক্ষায় নজিরবিহীন প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ এই সংকটে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।
ব্ল্যাকআউট মহড়া এবং প্রশাসনিক তৎপরতা ভারতের যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি এবং জনগণের স্থিতিস্থাপকতা পরীক্ষা করছে। জনগণের সহযোগিতা এবং প্রশাসনের দক্ষতা এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।