নয়াদিল্লি: লোকসভা ভোট মিটে গিয়েছে, বিজেপির লক্ষ্য এবার আগামী দশকের রাজনৈতিক ভিত্তি আরও শক্ত করা। আর ঠিক সেই জায়গাতেই জাতীয় রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দলের সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র কৌশলগত ম্যানুভারিং।
দলের অন্দরের খবর, এই প্রথমবারের মতো এক মহিলাকে বিজেপির সর্বোচ্চ সাংগঠনিক পদে বসানোর চিন্তাভাবনা চলছে জোরকদমে। সূত্র বলছে, বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার- উভয়ের মধ্যেই এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ইতিবাচক ঐকমত্য। শীর্ষ তালিকায় উঠে আসছে তিন পরিচিত নাম-নির্মলা সীতারামন, ডি পুরানদেশ্বরী এবং বনাথি শ্রীনিবাসন।
নির্মলা সীতারামন: অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও দক্ষিণের সমীকরণ
দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনায় সবচেয়ে জোরালো নাম নির্মলা সীতারামন। প্রতিরক্ষা এবং অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলানো এই নেত্রীর হাতে সভাপতি পদ তুলে দিলে দল যেমন সাংগঠনিকভাবে লাভবান হবে, তেমনই দক্ষিণ ভারতে বিজেপির শক্তি বাড়ানোতেও মিলবে বাড়তি গতি।
সম্প্রতি দিল্লিতে দলের সদর দফতরে জেপি নাড্ডা ও সংগঠনের শীর্ষ নেতা বি.এল. সন্তোষের সঙ্গে নির্মলার বৈঠক ঘিরে অন্দরমহলে জল্পনা তুঙ্গে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনা নিছক সৌজন্যমূলক নয়।
সীমিত সময়ে দলের সভাপতি হিসেবে জেপি নাড্ডা যে স্থিরতা এনে দিয়েছেন, এখন তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে একজন অভিজ্ঞ, পরিশীলিত এবং বিশ্বাসযোগ্য মুখ খোঁজা হচ্ছিল। সেই জায়গায় নির্মলা নিঃসন্দেহে একটি ‘সেফ পলিটিক্যাল বেট’।
ডি পুরানদেশ্বরী: দক্ষিণের আরও এক পরিণত মুখ BJP Woman President
অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি ডি পুরানদেশ্বরী-র নামও উঠে আসছে সমান গুরুত্বে। বহুভাষিক এই নেত্রী কংগ্রেসে থেকে শুরু করে বিজেপি পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক যাত্রায় দেখিয়েছেন অভিজ্ঞতার ছাপ।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আন্তর্জাতিক সফরে তিনি ছিলেন দলের মুখপাত্র, যা দলের অভ্যন্তরে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, অন্ধ্রপ্রদেশে বিজেপির সাম্প্রতিক ফোকাস এবং সেখানে টিডিপি-বিজেপি জোটের কৌশলগত ভবিষ্যতের নিরিখে পুরানদেশ্বরীও হয়ে উঠেছেন একটি তাৎপর্যপূর্ণ নাম।
বনাথি শ্রীনিবাসন: তামিল মুখ ও মহিলা মোর্চার অভিজ্ঞতা
তৃতীয় নামটি বনাথি শ্রীনিবাসন- তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক এবং প্রাক্তন মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় সভানেত্রী।
বিজেপির সংগঠনে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকা এই নেত্রী বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির সদস্য— একজন তামিল মহিলার এমন গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে জায়গা পাওয়া নিজেই একটি বার্তা।
দলের সূত্র বলছে, বিজেপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তামিলনাড়ু ও দক্ষিণ ভারতের রাজনৈতিক বিস্তার গুরুত্বপূর্ণ। সেই অনুযায়ী বনাথি একটি নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবেও কাজ করতে পারেন।
রাজনৈতিক পাঠ: নারী সভাপতি কি নিছক ‘সামাজিক বার্তা’, না গভীর কৌশল?
যদিও এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে- এই সিদ্ধান্ত কি শুধুই ৩৩ শতাংশ নারী সংরক্ষণের প্রতিফলন, না কি তার থেকেও গভীর কোনও রাজনৈতিক ক্যালকুলেশন লুকিয়ে আছে?
উল্লেখযোগ্য যে, মহিলা ভোটারদের গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে- বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে। সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষ থেকেও মহিলা নেতৃত্বে আগ্রহ বাড়ছে- যা এই সিদ্ধান্তকে আরেক ধাপ বাস্তবতা এনে দিচ্ছে।
যদি এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়, তাহলে এটি হবে বিজেপির ইতিহাসে প্রথম একজন মহিলা সভাপতি নিযুক্ত হওয়ার ঘটনা। প্রতীকী দিক থেকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই ২০২৯-এর নির্বাচনের আগে দলের সাংগঠনিক ও নির্বাচনী কৌশলে একটি স্পষ্ট বার্তা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।