বিজেপি ক্ষমতায় এসেই মুক্ত হল রত্ন ভাণ্ডার, মন্দিরের ‘জাতীয়করণ’-ই কি লক্ষ্য?

দীর্ঘ কয়েক দশক পর ক্ষমতার পালা বদল হয়েছে ওড়িশার। নবীন পট্টনায়েককে সিংহাসনচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মোহন চরন মাঝি। আর তারপরেই পুরির…

Jagannath dev

দীর্ঘ কয়েক দশক পর ক্ষমতার পালা বদল হয়েছে ওড়িশার। নবীন পট্টনায়েককে সিংহাসনচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মোহন চরন মাঝি। আর তারপরেই পুরির জগন্নাথ মন্দিরের প্রাচীন প্রথা বদল হল। দীর্ঘ ৪৬ বছর পর খুলতে চলেছে মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার। এবার সেই রত্ন ভাণ্ডারের অডিট হবে বলে প্রশাসন এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে। রবিবার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার খোলা হল।

সাড়ে চার দশকেরও বেশি সময় পর এদিন ভক্তদের সমক্ষে আনা হল জগন্নাথ দেবের রত্ন ভাণ্ডার৷ ওড়িশা সরকার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে রত্ন ভাণ্ডার ফের খোলার তদারকির জন্য প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে এক নয়া উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে ৷ সেই কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ গত মঙ্গলবারের বৈঠকে রত্ন ভাণ্ডার খোলার দিনটি চূড়ান্ত করেছিলেন ৷

   

পুরীর জগন্নাথ মন্দির ও রথযাত্রার ইতিহাস

বৈঠকের পর কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ বলেছিলেন, “১৪ তারিখ সরকারকে রত্ন ভাণ্ডার খোলার প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে রত্নটি খুললে ভক্তের তা দেখতে ভক্তের ভিড় উপচে পড়তে পারে। তবে ভক্তরা এই কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন ৷” বিচারপতি নির্দেশ দেন, চাবি না-পাওয়া গেলেও তালা ভেঙে খোলা হবে রত্ন ভাণ্ডারে দরজা ৷ শুধুমাত্র সরকারের অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষা ৷ আশা করছি ওড়িশা সরকার এই ব্যাপারে অনুমতি দেবে ৷” সেইমতো এদিন খোলা হয় মন্দিরের রত্নভাণ্ডার।

৭০ দিনেও গুনে শেষ করা যাবেনা? কী পাওয়া গেল পুরীর রত্ন ভান্ডার থেকে!

মন্দির পরিচালন কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, রত্নগুলি কোথায় রাখা হবে সেই (কক্ষ) চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেহেতু মন্দিরের সম্পত্তি বাইরে স্থানান্তর করা যাবে না, তাই মন্দিরের ভিতরে একটি নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করে সেখানেই রাখা হবে এই সমস্ত বহুমূল্য সম্পদ। গত বছর পুরির মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার খোলা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। সেই মামলার শুনানিতে একটি উচ্চস্তরের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।

টালমাটাল পরিস্থিতি ‘ইন্ডিয়া’র, সম্মুখসমরে জোটের দুই প্রধান দল

লোকসভা ভোটের আগেই বিজেপি জানিয়েছিল ক্ষমতায় এলেই খুলে দেওয়া হবে পুরির মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার। ঠিক তাই, দেশে ও রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই পুরির রত্ন ভাণ্ডার খুলে দিল বিজেপি সরকার। এর আগে রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্টে জানা গিয়েছে উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ডের মতো রাজ্যে একাধিক প্রসিদ্ধ মন্দিরের জাতীয়করণ করেছে মোদী সরকার। এমনকী মন্দিরের সম্পদের অডিট করাও হয়েছে। অতীতে এই মন্দিরগুলি মন্দিরের ট্রাস্টির অধীনে ছিল।

এই রূপান্তর আসলে মন্দিরের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার কৌশল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গত এক দশকে এমন অনেক নিয়ম হয়েছে যা আগে কোনওদিনই ছিল না বলে দাবি ভক্তদের। যেমন, অনেক প্রসিদ্ধ মন্দিরের ভোগ প্রসাদ পেতে গেলেও বর্তমানে প্রয়োজন হয় আধার কার্ডের। এবং সেই আধারের মাধ্যমেই মন্দিরে ভক্তদের আর্থিক সাহায্য দিতে হয়। এর মাধ্যমে  মন্দিরের আর্থিক কার্যকলাপের ওপর সরকার সরাসরি নজরদারি রাখতে পারে বলেও মনে করেন ওয়াকিবহাল মহল। 

এর আগে ক্ষমতায় এসেও দক্ষিণ ভারতের একাধিক মন্দিরের রাষ্ট্রীয়করণের উদ্যোগ নিয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে ওঠেনি। এবার ওড়িশায় ক্ষমতায় পালা বদল হয়েছে। তারফলে জগন্নাথ মন্দিরের মতো প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় মন্দিরের আর্থিক বিষয় খতিয়ে দেখে নিতে চায় সরকার।

‘খেলা শুরু’ অভিজিতের! মমতাকে বিরাট চ্যালেঞ্জ তমলুকের বিজেপি সাংসদের

লোকসভা ভোটের আগে পুরির বিজেপি সাংসদ সম্বিত্ পাত্র বলেছিলেন, “জগন্নাথ দেবও মোদীজির ভক্ত।” তার সেই মন্তব্যে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল সেই সময়। ধারনা ছিল এই মন্তব্যের জেরে হয়তো ওড়িশাতে ভালো ফল করবে না বিজেপি। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বিপুল আসন জিতে ক্ষমতা দখল করে নরেন্দ্র মোদীর দল।  তাহলে ভক্তের ধন দেখতেই কি এই নয়া উদ্যোগ? মন্দিরের প্রাচীন প্রথা সংস্কার ও অডিটের মাধ্যমে কি জগন্নাথ মন্দিরকেও জাতীয়করণ করতে চায় মোদী সরকার?  রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে এমনই।