বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি বিল গেটস সোমবার এখানে কেন্দ্রীয় কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই বৈঠকে কৃষি, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকের পর চৌহান এক বিবৃতিতে বলেন, “বিল গেটস ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের সঙ্গে কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কাজ করছে। আজ আমরা আবারও আলোচনা করেছি যে কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।” তিনি আরও জানান, এই সহযোগিতার মাধ্যমে ভারতের কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করা সম্ভব হবে।
চৌহান বিল গেটসকে জানিয়েছেন যে ভারত সরকার বর্তমানে জলবায়ু-প্রতিরোধী এবং জৈব-সংবর্ধিত ফসলের জাত উন্নয়নের দিকে বিশেষ জোর দিচ্ছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হল ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাই আমরা এমন ফসলের জাত তৈরি করতে চাই যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করতে পারে এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।” এই প্রকল্পগুলো কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার পাশাপাশি দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিল গেটস ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে ভারতে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে কাজ করে আসছে। এই সংস্থা কৃষকদের জন্য উন্নত প্রযুক্তি, বীজ এবং টেকসই চাষের পদ্ধতি প্রচারে সহায়তা করে। চৌহানের সঙ্গে আলোচনায় গেটস এই প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ভারতের কৃষি খাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করে কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং তাঁদের আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে চাই।” বৈঠকে আরও আলোচিত হয়েছে ডিজিটাল কৃষি প্রযুক্তি এবং কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। চৌহান জানান, ভারত সরকার কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করতে ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার বাড়াচ্ছে। এই প্রযুক্তি কৃষকদের ফসলের পরিচর্যা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং বাজার মূল্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম। গেটস ফাউন্ডেশন এই ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই সাক্ষাতের প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ভারত সরকারের সহযোগিতা কৃষি খাতে নতুন দিগন্ত খুলতে পারে। একজন কৃষি বিশেষজ্ঞ বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতের উদ্যোগ এবং গেটস ফাউন্ডেশনের প্রযুক্তিগত দক্ষতা একত্রিত হলে কৃষকদের জন্য টেকসই সমাধান তৈরি হবে।” চৌহান আরও জানিয়েছেন, ভারতের লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ করা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। এই লক্ষ্যে সরকার জৈব কৃষি, মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং জল সংরক্ষণের দিকেও কাজ করছে। বিল গেটস এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “ভারতের কৃষি নীতি বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে।”
এই বৈঠক ভারতের কৃষি খাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। গেটস ফাউন্ডেশনের সমর্থনে ভারতের কৃষকরা আগামী দিনে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।