বিহার: বিহারের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন আরজেডি নেতা তেজস্বী প্রসাদ যাদব (Tejashwi Yadav)। মুজফ্ফরপুর জেলার কান্টি হাই স্কুলে আয়োজিত এক জনসভা থেকে তিনি ঘোষণা করলেন, আসন্ন ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ২৪৩টি আসনেই প্রার্থী দেবে। এই অঙ্গীকার শুধু তাঁর দলের কর্মীদের উদ্দীপ্ত করেনি, বরং মহাগঠবন্ধনের ভেতরে চলতে থাকা আসন ভাগাভাগির টানাপোড়েনকেও তীব্র করে তুলেছে।
তেজস্বী এদিনের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বর্তমান এনডিএ সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, “এই সরকার কেবল সাম্প্রদায়িকতা ছড়ায়, দুর্নীতি বাড়ায়। গরিব মানুষ থানার স্তর থেকে রাজ্য সদর পর্যন্ত শোষিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন অপহরণ করে হত্যা করা হচ্ছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ২০২৫-এ বিহারকে এগিয়ে নিয়ে যাব। কান্টি, মুজফ্ফরপুর বা গাইঘাট—সব জায়গায় আমি লড়ব। আপনাদের সবার সমর্থন চাই।”
তেজস্বীর এই বক্তব্য সরাসরি চাপ সৃষ্টি করছে জোটসঙ্গী কংগ্রেস ও বাম দলগুলির উপর। মুজফ্ফরপুর আসন বর্তমানে কংগ্রেসের দখলে। সেখানে দাঁড়িয়েই আরজেডি প্রধানের “২৪৩ আসনে লড়াই”-এর ঘোষণা কংগ্রেসকে স্পষ্ট বার্তা দিল—আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
২০২০ সালের নির্বাচনে আরজেডি ১৪৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭৫টি আসন জেতে, যা তাকে একক বৃহত্তম দলে পরিণত করে। অপরদিকে কংগ্রেস ৭০টি আসনে লড়ে মাত্র ১৯টি আসনে জয়লাভ করে। এই প্রেক্ষাপটও আসন্ন সমঝোতার আলোচনায় আরজেডির অবস্থানকে শক্তিশালী করছে।
কংগ্রেসের বিহার প্রভারী কৃষ্ণ আল্লাভারু সম্প্রতি বলেন, “মহাগঠবন্ধনে নতুন দল যোগ দিলে সবার আসন ভাগাভাগির বিষয়ে নমনীয় হতে হবে। ভাল ও খারাপ আসনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে।” তাঁর এই বার্তা মহাগঠবন্ধনের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাকে স্পষ্ট করে তোলে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তেজস্বীর এই ঘোষণা শুধুমাত্র কর্মীদের উদ্দীপনা জোগানোর জন্য নয়। এটি আসলে একটি কৌশল—কংগ্রেসকে আলোচনায় চাপে রাখা, নিজের নেতৃত্বের অবস্থান স্পষ্ট করা এবং মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রাকৃতিক দাবিদার হিসেবে তুলে ধরা।
তেজস্বী বলেন, “বিহারে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ভেঙে পড়েছে। দুর্নীতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার শুধু ইঁদুরদের রক্ষা করে, কিন্তু গরিব মানুষকে রক্ষা করে না।” কান্টিতে বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়েই তিনি এই কটাক্ষ করেন।
২০২০ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিহারের রাজনীতিতে একাধিকবার পালাবদল ঘটেছে—এনডিএ গঠন, জেডিইউ-র সরে গিয়ে মহাগঠবন্ধনে যোগ, আবারও ২০২৪-এ এনডিএ-তে ফেরা। এই জটিল সমীকরণের মধ্যেই তেজস্বীর ঘোষণা যে বিহারের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সংশয় নেই। এখন চোখ থাকবে অক্টোবর-নভেম্বর ২০২৫-এর নির্বাচনের দিকে—সত্যিই কি আরজেডি সব আসনে লড়ে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করবে, নাকি শেষ মুহূর্তে মহাগঠবন্ধনের সমঝোতা বদলে দেবে চিত্র?