পাটনা: বিহারের রাজনীতিতে ফের রক্তের দাগ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাটনা জেলার মোখামা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের (Bihar Election) সময় গুলি করে খুন করা হল গ্যাংস্টার-থেকে-রাজনীতিক দুলারচন্দ যাদবকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। নির্বাচনের আগে এই হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্য জুড়ে।
পুলিশ সূত্রে খবর, সন্ধ্যা নাগাদ দুলারচন্দ যাদব স্থানীয় একটি জনসভা শেষ করে গাড়িতে ফিরছিলেন। মোখামার ব্যস্ত বাজার অঞ্চলে পৌঁছতেই বাইকে করে আসা দুষ্কৃতীরা তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি চালায়। গুলিতে দুলারচন্দ গুরুতরভাবে আহত হন। দ্রুত তাঁকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
দুলারচন্দ যাদব বিহারের রাজনীতিতে এক পরিচিত মুখ। একসময় তিনি অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন পর রাজনীতিতে প্রবেশ করে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। মোখামা অঞ্চলে তাঁর প্রভাব যথেষ্ট বিস্তৃত ছিল। স্থানীয় মানুষদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তাও ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু অপরাধের ছাপ কখনও তাঁর রাজনৈতিক জীবন থেকে মুছে যায়নি।
পাটনা জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, “এই হত্যাকাণ্ড যে অত্যন্ত পরিকল্পিত তা স্পষ্ট। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি। হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।” ঘটনাস্থল থেকে একাধিক খোলা কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ঘটনার পর থেকেই মোখামা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। দুলারচন্দ যাদবের সমর্থকেরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি তোলেন। এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে র্যাফ ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী।
রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র তরজা। বিরোধী দল প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, “নির্বাচনের আগে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। প্রভাবশালী নেতাকেও এখন রাস্তায় গুলি করে মারা হচ্ছে।” শাসক দলের দাবি, “এই হত্যাকাণ্ড রাজনীতিকে কলুষিত করার চেষ্টা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছে। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, “এই ধরণের সহিংসতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। তদন্তের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
স্থানীয় মানুষদের মতে, দুলারচন্দ যাদবের মৃত্যু মোখামার রাজনৈতিক ভারসাম্যকে নাড়িয়ে দেবে। তাঁর অনুগামীরা ইতিমধ্যেই নতুন নেতৃত্ব গঠনের কথা ভাবতে শুরু করেছেন। তবে অনেকের আশঙ্কা, এই ঘটনার জেরে নির্বাচনী হিংসা আরও বাড়তে পারে।
ভোটের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এই হত্যাকাণ্ডে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিয়ে। বিহারের রাজনৈতিক মহলে ফের একবার উঁকি দিচ্ছে পুরনো সেই প্রশ্ন — রাজনীতি আর অপরাধের সীমানা কোথায়?


