পাটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এল উন্নয়নের মহারূপরেখা। শুক্রবার পাটনায় একযোগে প্রকাশিত হল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) যৌথ ইস্তেহার, যেখানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে এক কোটি চাকরি, বন্যামুক্ত বিহার, এবং আত্মনির্ভর রাজ্যের। এই ইস্তেহার কেবল নির্বাচনী অঙ্গীকার নয়, বরং ভবিষ্যৎ বিহারের ‘দৃষ্টিপত্র’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
ইস্তেহার প্রকাশ করেন বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জে.পি. নাড্ডা, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, হাম (সেক্যুলার) নেতা জিতন রাম মাঞ্জি, লজপা (রাম বিলাস) প্রধান চিরাগ পাসওয়ান এবং আরএলএম নেতা উপেন্দ্র কুশওয়াহা। মঞ্চে এনডিএ নেতৃত্বের উপস্থিতি বার্তা দেয়, জোটের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও আত্মবিশ্বাসই এবারের প্রচারের মূলধারা।
চাকরি সৃষ্টিই অগ্রাধিকার
ইস্তেহারের মূল প্রতিশ্রুতি, আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি চাকরি। সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতেই কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে প্রতিটি জেলায় গড়ে তোলা হবে আধুনিক স্কিল সেন্টার। তরুণ প্রজন্মের জন্য ‘মেগা স্কিল মিশন’ চালু করার পাশাপাশি, শিল্প, প্রযুক্তি ও পরিষেবা খাতে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে বিশদ পরিকল্পনা।
নারী ও প্রান্তিক সমাজের ক্ষমতায়ন Bihar Election NDA Manifesto 2025
‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’-র আওতায় দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান, এক কোটি ‘লক্ষপতি দিদি’ এবং ‘মিশন কোটিপতি’— এই তিন স্তম্ভে নারী স্বনির্ভরতার স্বপ্ন গড়ছে এনডিএ। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির উন্নয়নের জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের তত্ত্বাবধানে গঠিত হবে প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতির নেতৃত্বাধীন একটি উচ্চস্তরীয় কমিটি।
কৃষক সম্মান ও গ্রামীণ উন্নয়ন
কৃষকদের জন্য ‘কারপুরি ঠাকুর কিষাণ সম্মান নিধি’ প্রকল্পে বছরে ৩,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা এবং এক লক্ষ কোটি টাকার কৃষি অবকাঠামো বিনিয়োগের পরিকল্পনা। পাশাপাশি, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের নিশ্চয়তা, মৎস্য ও দুগ্ধ উৎপাদনে দ্বিগুণ বৃদ্ধি, এবং প্রতিটি ব্লকে প্রসেসিং সেন্টার স্থাপনের ঘোষণা করা হয়েছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নতুন রূপরেখা
‘কেজি থেকে পিজি’— দরিদ্র পরিবারের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এনডিএ। প্রতিটি বিদ্যালয়ে আধুনিক ডিজিটাল ল্যাব ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে উঠবে ‘এডুকেশন সিটি’।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রতিটি জেলায় মেডিকেল কলেজ ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল নির্মাণের অঙ্গীকার করা হয়েছে। শিশু ও অটিজম-সংক্রান্ত রোগের জন্য আলাদা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।
শিল্পোন্নয়ন ও অবকাঠামোয় নবজাগরণ
‘বিকসিত বিহার ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিশন’-এর আওতায় এক লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ, প্রতিটি জেলায় আধুনিক কারখানা এবং ১০টি নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক— এই পরিকল্পনা রাজ্যজুড়ে শিল্প বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
যোগাযোগ পরিকাঠামোয় ‘বিহার গতিশক্তি মাস্টারপ্ল্যান’-এর অধীনে ৭টি এক্সপ্রেসওয়ে, ৩,৬০০ কিলোমিটার রেলপথ, এবং ‘নমো র্যাপিড রেল’ চালুর কথা বলা হয়েছে।
বন্যামুক্ত বিহারের স্বপ্ন
সবচেয়ে আলোচিত প্রতিশ্রুতি— আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ বন্যামুক্ত বিহার। নদী সংযোগ, বাঁধ শক্তিশালীকরণ এবং জলসংরক্ষণভিত্তিক “ফ্লাড-টু-ফরচুন” মডেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনের কথা জানিয়েছে এনডিএ।
সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির যুগল দৃষ্টি
বিহারকে পূর্ব ভারতের নতুন টেক-হাব করে তুলতে প্রতিরক্ষা করিডর, সেমিকন্ডাক্টর পার্ক, গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার ও ফিনটেক সিটি গড়ার ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি, মিথিলা টেক্সটাইল ও ডিজাইন পার্ক, আঙ্গ মেগা সিল্ক পার্ক এবং ফিল্ম সিটির পরিকল্পনায় সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের দিকেও জোর দিয়েছে ইস্তেহার।
ভোটের দিনক্ষণ
২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভার ভোট হবে দু’দফায়, ৬ এবং ১১ নভেম্বর। গণনা ১৪ নভেম্বর।



