পাটনা: বিহারের রাজনীতিতে তাঁকে বলা হচ্ছিল ‘সবচেয়ে বড় চমক’। উন্নয়ন-ভিত্তিক রাজনীতির নতুন বয়ান গড়ে তুলতে যে তৃতীয় শক্তি মাঠে নামবে, সেই প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন প্রাশান্ত কিশোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটে লড়বেন না তিনি৷ পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা।
লড়ছেন না পিকে
প্রথমে শোনা গিয়েছিল, তেজস্বী যাদবের গড় রাঘোপুর থেকেই নিজের প্রথম নির্বাচনী অভিযান শুরু করবেন কিশোর। ১১ অক্টোবর জন সুরাজ পার্টির প্রচার শুরুও হয়েছিল সেই রাঘোপুর থেকে, যা আরও জোরদার করেছিল এই জল্পনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়েছে ৩৭ বছরের ব্যবসায়ী চঞ্চল সিং-কে। জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর প্রাক্তন সদস্য চঞ্চল এখন জন সুরাজ যুব শাখার সহসভাপতি।
এই সিদ্ধান্তে কার্যত ম্লান হয়ে গেল জন সুরাজের তৃতীয় শক্তি হয়ে ওঠার আশা। এনডিএ বনাম মহাগাঠবন্ধনের দ্বিমুখী লড়াইয়ে প্রাশান্ত কিশোরের অনুপস্থিতি নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। যদিও কিশোর জানিয়েছেন, ১৫০টির কম আসন পেলে সেটাই হবে তাঁর দলের পরাজয়, যা বিজেপির অমিত শাহর ১৬০ আসনের লক্ষ্যের সঙ্গে তুলনীয়।
‘হাইপ বনাম বাস্তবতা’ Bihar Battle May Hinge On ‘M’ Factor
তবে আরজেডি নেতা তেজস্বীর মুখোমুখি হতে না চাওয়ায় কিশোরের রাজনৈতিক পদক্ষেপকে অনেকেই দেখছেন ‘হাইপ বনাম বাস্তবতা’র নিরিখে। বিজেপি ইতিমধ্যেই ঠাট্টা করে বলছে, “যাঁর কৌশল আমরা কিনেছিলাম, তিনিই এখন মাঠে নেই।” মহাগাঠবন্ধনের শিবিরও বলছে, “জন সুরাজের জোয়ার আছে শুধু টুইটার আর টেলিভিশনে, গ্রাউন্ডে নয়।”
ফয়সালা হবে ১৪ নভেম্বর, যখন খোলা হবে ইভিএম। তবে ইতিমধ্যেই পাটনা, দারভাঙ্গা, ভাগলপুর ও গয়ায় কিশোরের ‘৪,৫০০ জন সভা’ ঘিরে আলোচনা শুরু হয়েছে। জাতপাত নয়, উন্নয়ন আর শাসনব্যবস্থার ওপর তাঁর জোর, সেটাই রাজনীতিতে নতুন মাত্রা এনেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন: হাওয়া গেল থেমে
এক সময় ধারণা করা হয়েছিল, ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (SIR) হবে ভোটের মোড় ঘোরানো ইস্যু। কিন্তু বাস্তবে সেটি এখন প্রায় অপ্রাসঙ্গিক। প্রায় ৬৯ লক্ষ মানুষের নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়লেও রাজ্যজুড়ে কোনও বড় বিক্ষোভ হয়নি। নির্বাচন কমিশনও জানায়নি কতজন ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, কিংবা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কত নাম বাদ গেছে।
বিরোধীদের প্রচারিত “ভোট চুরি”র তত্ত্বও মাঠে সাড়া ফেলতে পারেনি। রাহুল গান্ধীর ‘ভোট অধিকারের যাত্রা’-র প্রাথমিক উচ্ছ্বাসও এখন স্তিমিত। বিহারবাসী এখন ধর্ম বা জাতপাতের বদলে উন্নয়ন, জীবিকার সহজতা ও দায়বদ্ধতাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন, এই বাস্তবটাই উঠে আসছে ভোট-পূর্ব সমীক্ষায়।
এবারের আসল ‘M’ ফ্যাক্টর: মহিলারাই কি গড়বেন বিহারের ভবিষ্যৎ?
এবারের নির্বাচনের আসল এক্স ফ্যাক্টর হতে পারে ‘M’— অর্থাৎ মহিলা ভোটার। বিহারে বর্তমানে ৩.৫ কোটি নারী ভোটার আছেন, যা পুরুষ ভোটারের তুলনায় মাত্র ৪০ লক্ষ কম। আগের ভোটগুলোয় দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ মহিলা ভোটই গেছে নীতীশ কুমারের ঝুলিতে।
এবারও তাঁর সরকার মহিলা কর্মসংস্থানের জন্য চালু করেছে ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’, যা মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতার দিকে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, তেজস্বী যাদবের প্রতিশ্রুতি দরিদ্র ও অনগ্রসর শ্রেণির নারীদের মাসে ২,৫০০ টাকা ভাতা। দুই প্রতিশ্রুতির মধ্যেই তফাতটা সুস্পষ্ট একজন দিচ্ছেন ক্ষমতায়নের স্বপ্ন, অন্যজন আশ্বাস দিচ্ছেন অনুদানের।
মধ্যপ্রদেশের ‘লাড়লি বেহনা’, মহারাষ্ট্রের ‘লাড়কি বহিনি’ বা ঝাড়খণ্ডের ‘মাইয়া সম্মান’— এসব প্রকল্প যেমন নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে, তেমনি বিহারেও ‘মহিলা ভোটারদের মন’ শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করতে পারে কে হবেন রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী।