নয়াদিল্লি: দেশের তামাকজাত পণ্যের বাজারে বড়সড় পরিবর্তন আনল কেন্দ্রীয় সরকার। সম্প্রতি ঘোষিত জিএসটি সংস্কারের ফলে সিগারেট ও গুটখার মতো তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়তে চলেছে, তবে বিড়ির (Bidis) দামে আসছে স্বস্তি। এতদিন পর্যন্ত বিড়ির উপর ২৮ শতাংশ জিএসটি বসত। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এই করের হার কমিয়ে আনা হয়েছে ১৮ শতাংশে।
শুধু তাই নয়, বিড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত তেন্ডু পাতার জিএসটি ১৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশে। অন্যদিকে সিগারেট, পান মশলা এবং গুটখার উপর আরোপিত ২৮ শতাংশ কর বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪০ শতাংশ।
সরকারি সূত্রে খবর, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে এই নতুন জিএসটি হার। তবে আপাতত ক্ষতিপূরণ সেসের অধীনে থাকা ঋণ ও সুদের দায় মিটিয়ে ফেলার আগে পর্যন্ত তামাকজাত পণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকবে।
বিডির উপর কর কমানোর সিদ্ধান্ত মূলত দেশের ঐতিহ্যবাহী বিড়ি শিল্পকে রক্ষা করার জন্য বলে মনে করা হচ্ছে। এই শিল্পে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। বিশেষত গ্রামীণ মহিলারা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাই করের চাপ কমিয়ে বিড়ি শিল্পের সুরক্ষার চেষ্টা করেছে কেন্দ্র।
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, সিগারেট যেমন ক্ষতিকারক, বিড়ি কি তেমন নয়? অনেকেই মনে করছেন, বিড়ি সিগারেটের চেয়েও বেশি ক্ষতিকারক এবং এটি মূলত নিম্নবিত্ত মানুষের হাতে পৌঁছয়, যা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। অনেকে কটাক্ষ করে বলেছেন, বিড়ির জিএসটি কমানো প্রমাণ করে কেন্দ্র “গরিবদের কথা ভাবছে।”
বিডি শিল্পের জন্য কর কমানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার ছিল বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা ও আরএসএস ঘনিষ্ঠ সংগঠন। স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে লেখা চিঠিতে জানায়, ২৮ শতাংশ জিএসটির কারণে বিড়ি শিল্পে কর্মসংস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অনিবন্ধিত বিড়ি উৎপাদন ইউনিটের শ্রমিকদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। আগে বিড়ির উপর সামান্য কেন্দ্রীয় আবগারি শুল্ক বসত, এমনকি অনেক রাজ্য বিড়ির উপর বিক্রয় করও বসায়নি। ফলে এই শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নতুন করে কর কমানোর দাবি তোলা হয়েছিল।
নতুন জিএসটি হারের প্রভাব সরাসরি বাজারে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সিগারেট, গুটখা, পান মশলার দাম আরও বেশি হয়ে যাবে, অন্যদিকে বিড়ির দাম কিছুটা কমবে। ফলে গ্রামীণ ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের কাছে বিড়ির চাহিদা হয়তো আরও বাড়তে পারে। যদিও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করছেন, তামাকজাত পণ্যের উপর কর কমানো জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বার্তা দেয়।
এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত বিহার-সহ একাধিক রাজ্যে আগামী বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে কেন্দ্র বিড়ি শিল্পে জিএসটি কমিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির সমীকরণে প্রভাব ফেলতে চাইছে বলে অনেকে মনে করছেন।