ভান্ডারা (মহারাষ্ট্র): স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার সময় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ল শিশুদের ভর্তি একটি ভ্যান। মহারাষ্ট্রের ভান্ডারা জেলার সুরেওয়ারা এলাকায় স্কুলভ্যানটি উল্টে নদীর খালে পড়ে গেলে আহত হয় অন্তত ১০ জন ছাত্রছাত্রী। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খারাপ রাস্তায় বিশাল গর্ত বা পাথহোল এড়াতে গিয়ে চালকের নিয়ন্ত্রণ হারানোয় ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার বিকেলে, যখন একটি প্রাইভেট স্কুলভ্যান শিশুদের তাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল। রাস্তাজুড়ে গভীর গর্ত থাকায় ভ্যানচালক একের পর এক গর্ত এড়িয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচু সেতু থেকে ভ্যানটি খালের মধ্যে পড়ে যায়। মুহূর্তে কান্না আর চিৎকারে ভরে ওঠে গোটা এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এসে শিশুদের উদ্ধার করেন এবং দ্রুত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান।
লেফটেন্যান্ট হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে ভারতীয় সেনা, যার বেতন প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা
চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে ছোট্ট শিক্ষার্থীরা। ভান্ডারা জেলা হাসপাতাল থেকে পাওয়া দৃশ্যে দেখা গিয়েছে—চিকিৎসক ও নার্সরা আহত শিশুদের পরীক্ষা করছেন, আর পাশে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকের মুখে ছিল রক্তের দাগ, কারও মাথায় ব্যান্ডেজ, কেউ আবার নীরবে তাকিয়ে আছে শূন্যে—যেন বুঝতে পারছে না কীভাবে মুহূর্তে স্কুলের দিন শেষ হয়ে গেল হাসপাতালে।
অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ তীব্র। তাঁদের দাবি, এই দুর্ঘটনার একমাত্র দায়ী প্রশাসনের অবহেলা। এক অভিভাবক বলেন, “প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে আমাদের সন্তানদের যেতে হয়। আমরা বহুবার স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি যে রাস্তায় গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। আজ তার ফল।”
স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (PWD) দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার মেরামতের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। বর্ষার জলে গর্তগুলো ছোট লেকের মতো হয়ে যায়, আর শুকোলে ধুলো উড়ে যায়—ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রতিনিয়ত। এক ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যে এক ব্যক্তি বলেন, “ভান্ডারা তো লেকের জেলা, এখন রাস্তাতেও লেক তৈরি হচ্ছে! তাই আমাদের গর্বের নাম আরও প্রমাণিত হচ্ছে।”
ভান্ডারা জেলা আসলেই ‘লেকের জেলা’ নামে পরিচিত। প্রায় ৩,৫০০টি হ্রদে ঘেরা এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একসময় ছিল গর্বের বিষয়। কিন্তু এখন মানুষ সেই উপাধিকেই বিদ্রুপে পরিণত করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লিখেছেন, “রাস্তায় এত জল জমে গেছে যে এখন গাড়ি চালাতে নয়, নৌকা চালাতে হবে।”
জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, আহত শিশুদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা কিছুটা গুরুতর, বাকিরা স্থিতিশীল। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তবে সাধারণ মানুষ আর সেই আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না। এলাকাবাসীর কথায়, “প্রতিবারই এমন প্রতিশ্রুতি শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয় না। আজ যদি শিশুরা প্রাণ হারাত, তার দায় কে নিত?”
এই ঘটনার পর আবারও সামনে এসেছে ভারতের বহু প্রদেশে রাস্তার বেহাল অবস্থার প্রশ্ন। রাস্তাঘাট উন্নয়নের প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও, তার সঠিক প্রয়োগ না হওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। ভান্ডারার এই দুর্ঘটনা যেন সেই অব্যবস্থার এক ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি।