বেরেলি: উত্তরপ্রদেশের বেরেলিতে সেপ্টেম্বর মাসে “আই লাভ মুহাম্মদ” প্রতিবাদ ঘিরে যে হিংসা ছড়িয়েছিল, সেই মামলায় বড় মোড়। বেরেলির অতিরিক্ত জেলা ও সেশন আদালত শুক্রবার মাওলানা তওকির রাজা খান এবং আরও পাঁচ অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ করেছে। আদালতের এই রায়ের ফলে অভিযোগকারীরা আপাতত কারাগারে থাকবেন, আর মামলাটি আরও গুরুত্ব সহকারে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ সেপ্টেম্বর, যখন “আই লাভ মুহাম্মদ” নামে একটি প্রতিবাদ মিছিল হঠাৎই সহিংসতায় পরিণত হয়। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, মিছিলে উপস্থিত কিছু উগ্রপন্থী অংশগ্রহণকারী সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে, পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগায় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর পাথর ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিচার্জ এবং টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করতে হয়।
২০২৬ আইপিএল এ সুপার কিংস ছাড়ছেন স্যার জাদেজা ?
এই ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন ইত্তেহাদে মিল্লাত কাউন্সিলের নেতা মাওলানা তওকির রাজা খান, যিনি নিজে একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রতিবাদের সময় উসকানিমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন, যা ভিড়কে উত্তেজিত করে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষে রূপ নেয়।
প্রসঙ্গত, মাওলানা তওকির রাজা খান প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন যে, তিনি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পক্ষে ছিলেন এবং পুলিশের বিরুদ্ধে “অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ”-এর অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়েছে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা এবং প্রশাসন তাঁকে নির্বাচনের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফাঁসাতে চায়।
তবে আদালত আজকের শুনানিতে সরকারি পক্ষের যুক্তি মেনে নেয়। প্রসিকিউশন দাবি করে যে, অভিযুক্তদের মুক্তি দিলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে এবং সাক্ষীদের উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। আদালতও মনে করেছে, মামলার সংবেদনশীলতা ও প্রমাণ নষ্টের আশঙ্কার কারণে জামিন দেওয়া এখনই যুক্তিসঙ্গত নয়।
আইনজীবী মহলে এই রায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, আবার অনেকে মনে করছেন, এটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মোট ১৩টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে হামলা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, বেআইনি সমাবেশ, ও উসকানিমূলক বক্তব্য রাখার মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তদন্তকারী দল সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিও ক্লিপ ও সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট বিশ্লেষণ করছে।
অন্যদিকে, বেরেলির সাধারণ মানুষ চান দ্রুত শান্তি ফিরে আসুক। শহরের দোকানদার, ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে ধর্মীয় সংগঠন সবাই চাইছে ন্যায়বিচার হোক, তবে যেন অযথা নিরপরাধ কেউ ভোগান্তিতে না পড়ে। মাওলানা তওকির রাজা খানকে ঘিরে এই মামলাটি এখন রাজ্যের রাজনীতিতেও বড় আলোচনার কেন্দ্র। বিরোধী দলগুলো বলছে, সরকার “ধর্মের নামে রাজনীতি করছে”, আর বিজেপি নেতৃত্ব বলছে, “আইন নিজের পথে চলবে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
