বেঙ্গালুরু: দক্ষিণ ভারতের শান্ত শহর বেঙ্গালুরুতে ফের চাঞ্চল্য। কর্ণাটকের দেবরাবিসনাহল্লি গ্রামের এক প্রাচীন মন্দিরে ঢুকে মূর্তির উপর আক্রমণ চালানোর অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত যুবক নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করেছে। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার সকালে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ভোরবেলা ওই ব্যক্তি মন্দির চত্বরে প্রবেশ করে প্রথমে পাথর ছুঁড়ে মন্দিরের দেয়ালে আঘাত করে। এরপর সরাসরি গিয়ে দেবতার মূর্তিকে জুতো দিয়ে আঘাত করতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যেই উপস্থিত মানুষজন চমকে ওঠে এবং একাংশ তাঁকে ধরে ফেলে। পরে জনতা নিজেরাই ওই যুবককে বাঁধা অবস্থায় পুলিশে তুলে দেয়।
কেন্দ্রের বড় ঘোষণা! সরকারি কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটির সীমা বাড়ল ২৫ লক্ষে
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অভিযুক্তের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সে নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক বলে পরিচয় দিয়েছে এবং ইংরেজি ও ভাঙা হিন্দিতে কথা বলছিল। সন্দেহ করা হচ্ছে, সে বেঙ্গালুরু শহরে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে এবং কোনো জঙ্গি বা সংগঠিত গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা মন্দিরের পাশে দোকান চালাই। হঠাৎ দেখি ওই ব্যক্তি মন্দিরে ঢুকে চিৎকার করছে, তারপর জুতো দিয়ে মূর্তিতে আঘাত করছে। সবাই মিলে ছুটে গিয়ে তাকে ধরে ফেলি।”
এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে যায় পুলিশ ও ফরেনসিক টিম। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজে পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে। পুলিশ ওই ফুটেজ খতিয়ে দেখছে এবং অভিযুক্তের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, “অভিযুক্তের কাছে কোনো বৈধ পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে সে বলছে, বাংলাদেশ থেকে এসেছে এবং কিছুদিন ধরে বেঙ্গালুরুতে দিনমজুরের কাজ করছিল।” তবে তদন্তকারীদের মতে, এটি নিছক ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে আরও বড় উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
এই ঘটনার পর থেকেই এলাকায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বেঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, “আমরা ধর্মীয় শান্তি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তে যদি দেখা যায় সে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে, তবে বিদেশি আইনে মামলা রুজু করে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।”
এদিকে, ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই নেটিজেনদের মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে দাবি করছেন, বাংলাদেশ থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অন্যদিকে, একাংশ বলছে, “আইনের হাতে অভিযুক্তকে সোপর্দ করা হয়েছে, তাই এখন আদালতের রায়ের অপেক্ষা করা উচিত।”
বর্তমানে অভিযুক্ত যুবক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছে, এবং জানা যাচ্ছে, সে আগে থেকেই ভারতে কিছুদিন ধরে অবস্থান করছিল। পুলিশ তার যোগাযোগ এবং বাসস্থানের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। একজন সিনিয়র অফিসার বলেন, “আমরা এই ঘটনার নেপথ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ না অন্য কোনো বড় নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছি। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।”


