Himachal Avalanche Alert: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হিমাচলের চার জেলা বড়সড় তুষারধসের সতর্কবার্তা

হিমাচল প্রদেশের উচ্চভূমিতে তুষারধসের (Himachal Avalanche) আশঙ্কায় আগামী ২৪ ঘণ্টার জন্য সতর্কতা জারি করেছে সিমলার আবহাওয়া দপ্তর। শনিবার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে হালকা তুষারপাত শুরু…

Avalanche Alert in Himachal

হিমাচল প্রদেশের উচ্চভূমিতে তুষারধসের (Himachal Avalanche) আশঙ্কায় আগামী ২৪ ঘণ্টার জন্য সতর্কতা জারি করেছে সিমলার আবহাওয়া দপ্তর। শনিবার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে হালকা তুষারপাত শুরু হয়েছে এবং আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত, মঙ্গলবার ছাড়া, বৃষ্টি ও তুষারপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চন্ডিগড়ের ডিফেন্স জিওইনফরম্যাটিক্স রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্ট (ডিজিআরই) শনিবার একটি ‘অরেঞ্জ’ সতর্কতা জারি করেছে। চম্বা, কুল্লু, কিন্নর এবং লাহৌল ও স্পিতি জেলার উচ্চভূমিতে তুষারধসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাজ্যের কিছু অংশে হালকা তুষারপাত দেখা গেছে। লাহৌল ও স্পিতির গোন্দলায় ৮ সেন্টিমিটার এবং কুকুমসেরিতে ৪.২ সেন্টিমিটার তুষার জমেছে। কিন্নরের কালপায় তুষারপাত হয়েছে ২ সেন্টিমিটার। এই তুষারপাত এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন উচ্চভূমির জনজাতি এলাকার বাসিন্দাদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। বিশেষ করে চম্বার পঙ্গি উপত্যকায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান তুষারপাত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে স্থানীয়রা অসুস্থদের পালকিতে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। শুক্রবার পুন্টো গ্রামের রোগী শ্যাম সিংকে পালকিতে করে কিল্লারের সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে হুদান পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা শের সিং এবং হীরা লাল নামে দুই রোগীকে পিঠে বহন করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

   

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শনিবার থেকে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। কালপায় ২২.৬ মিলিমিটার, মানালিতে ১৮ মিলিমিটার, কোটখাইয়ে ১৬.১ মিলিমিটার, রোহরুতে ১৫ মিলিমিটার, সালোনিতে ১৪.২ মিলিমিটার, থিওগ এবং কুফরিতে ১২ মিলিমিটার করে, কাসৌলিতে ১১ মিলিমিটার, সিওবাগে ১০ মিলিমিটার, ভুন্টারে ৮.৬ মিলিমিটার, সিমলায় ৮.২ মিলিমিটার, সোলানে ৭ মিলিমিটার এবং চম্বায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ভুন্টার, জোট এবং পালমপুরে বজ্রপাত সহ ঝড় দেখা গেছে, আর কুফরিতে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। রাতে সবচেয়ে ঠান্ডা ছিল কুকুমসেরি, যেখানে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলায় সিরমৌর জেলার ধৌলাকুয়ানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশে ৬০.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা স্বাভাবিক ৫৭.৪ মিলিমিটারের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। এই অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং তুষারপাত উচ্চভূমির জন্য তুষারধসের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। ডিজিআরই-এর সতর্কতা অনুসারে, চম্বা, কুল্লু, কিন্নর এবং লাহৌল ও স্পিতির উচ্চভূমিতে তুষারধসের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় প্রশাসন এলাকাবাসীদের সতর্ক থাকার এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে পরামর্শ দিয়েছে।

পঙ্গি উপত্যকার জনজাতি সম্প্রদায়ের জন্য এই আবহাওয়া বিশেষভাবে কঠিন। রাস্তা বন্ধ থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, তুষারপাতের কারণে বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। শ্যাম সিংয়ের মতো রোগীদের পালকিতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এই অঞ্চলের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “আমাদের এখানে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে জীবন থেমে যায়। অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য এভাবে পিঠে বা পালকিতে নিয়ে যেতে হয়।”

Advertisements

এই তুষারধসের সতর্কতা হিমাচলের পর্যটন শিল্পের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। মার্চ মাসে অনেকে সিমলা, মানালি এবং কুল্লুর মতো জায়গায় ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতি এবং তুষারধসের ঝুঁকির কারণে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, “আমরা পর্যটকদের পরামর্শ দিচ্ছি যেন তারা উচ্চভূমিতে যাওয়ার পরিকল্পনা স্থগিত রাখেন। আগামী কয়েকদিন আবহাওয়া অস্থির থাকবে।”

হিমাচল প্রদেশে তুষারধসের ইতিহাস নতুন নয়। প্রতি বছর শীতকালে এবং বসন্তের শুরুতে এই ধরনের ঘটনা ঘটে। লাহৌল ও স্পিতি, কিন্নর এবং চম্বার উচ্চভূমি তুষারধসের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছরও এই অঞ্চলে তুষারধসে বেশ কয়েকটি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং জনজীবনে বিঘ্ন ঘটেছিল। এবারের সতর্কতা জারির পর স্থানীয় প্রশাসন জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, “আমরা উদ্ধারকারী দল এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রস্তুত রেখেছি। জনগণকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমাচলের আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তন এসেছে। অতিরিক্ত তুষারপাত এবং বৃষ্টি তুষারধসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। একজন আবহাওয়াবিদ বলেন, “এই বছর মার্চে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এটি তুষারের স্তরকে অস্থিতিশীল করে তুলছে, যা তুষারধসের কারণ হতে পারে।” এই পরিস্থিতিতে পরিবেশবিদরা সরকারের কাছে টেকসই উন্নয়ন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ, ১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার ভোর ১:০৯ মিনিটে (ভারতীয় সময়) এই প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে।  আগামী ২৪ ঘণ্টা হিমাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রশাসনের সতর্কতাই এই সংকট মোকাবিলার চাবিকাঠি হতে পারে। তুষারধসের এই আশঙ্কা কেটে গেলে রাজ্যে স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।