গুয়াহাটি: ধুবড়ি জেলায় একের পর এক উত্তেজক ঘটনার পর রাজ্য সরকার কড়া অবস্থান গ্রহণ করল। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা শুক্রবার সরেজমিনে ধুবড়ি পরিদর্শনে এসে ঘোষণা করেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাতের সময় জারি করা হচ্ছে ‘শুট-অ্যাট-সাইট’ আদেশ। তাঁর সাফ হুঁশিয়ারি, “রাতে কেউ বাইরে বেরোলে বা পাথর ছোঁড়ার চেষ্টা করলে, তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে।”
তিনি বলেন, “একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ধুবড়িকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু অসম সরকার তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করবে না। আমি আজই গুয়াহাটিতে ফিরে গিয়ে এই নির্দেশ কার্যকর করব।”
কী ঘটেছে ধুবড়িতে?
ঘটনার সূত্রপাত ইদের পরদিন, ৭ জুন। ধুবড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হনুমান মন্দিরের সামনে গরুর কাটা মুণ্ড পড়ে থাকতে দেখা যায়। সংবেদনশীল এই ঘটনায় এলাকার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের নেতৃত্বই শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান, তবে তার পরদিন ফের মন্দির চত্বরে একই ধরনের ঘটনা ঘটে।
এবার শুধু গরুর মাংসই নয়, রাতের আঁধারে পাথর ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রবিবার ধুবড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন, যা পরদিন তুলে নেওয়া হয়।
উসকানিমূলক পোস্টার ঘিরে চাঞ্চল্য Assam Shoot-at-Sight Order
ঘটনার মাত্র একদিন আগেই ধুবড়িতে দেখা যায় ‘নবীন বাংলা’ নামক একটি সংগঠনের লাগানো উসকানিমূলক পোস্টার, যেখানে খোলাখুলিভাবে দাবি করা হয় ধুবড়িকে বাংলাদেশের অংশে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই ধরনের বার্তা ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চরম চাঞ্চল্য ছড়ায়।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এটা নিছক কাকতালীয় ঘটনা নয়। পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। আমি খবর পেয়েই ধুবড়িতে চলে এসেছি। এই জেলাকে কেউ ভারতের ভৌগোলিক সীমা থেকে বিচ্ছিন্ন করার স্বপ্ন দেখলে, সেটা চুরমার করে দেওয়া হবে।”
গরু পাচার ও ‘বিফ মাফিয়া’র উত্থান
শুধু সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী আরও একটি নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনেন। তিনি বলেন, “এই ইদের আগে ধুবড়িতে হাজার হাজার গরু পশ্চিমবঙ্গ থেকে এনে জবাই করা হয়েছে। এর পেছনে কাজ করছে নতুন একটি ‘বিফ মাফিয়া’, যারা সীমান্ত জুড়ে পাচার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।” তিনি ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং গরু পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের নির্দেশও দিয়েছেন।
প্রশাসনিক কড়াকড়ি ও নিরাপত্তা জোরদার
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ধুবড়িতে অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য সিআরপিএফ ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (RAF) মোতায়েন করা হচ্ছে। জেলা জুড়ে চালানো হচ্ছে ধরপাকড় অভিযান। যারা আইন নিজের হাতে তুলেছে, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, “প্রয়োজনে আমি নিজে এসে হনুমান মন্দির পাহারা দেব। অসমের ভূমিতে সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বালানোর কোনও সুযোগ থাকবে না।”
২০২৬ সালে ধুবড়িতে ঈদে থাকার বার্তা
সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী এক আবেগঘন বার্তায় বলেন, “আগামী বছর ইদের দিন আমি নিজে ধুবড়িতে থাকব এবং পরদিনও এখানে থেকে জনগণের পাশে দাঁড়াব। ধুবড়িকে কেউ বিশৃঙ্খলার হাতিয়ার বানাতে পারবে না।”
তিনি আরও জানান, সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ “ধুবড়িকে অসম থেকে বিচ্ছিন্ন করার কোনও চক্রান্ত বরদাস্ত করা হবে না। অসম সরকার ও পুলিশ প্রশাসন আইন অনুযায়ীই কাজ করবে। কিন্তু যে বা যারা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাবে, তাদের ফল ভোগ করতেই হবে।”