অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে ময়দানে অসম প্রশাসন

বাংলাদেশ-ভারত (Indo-Bangladesh) সীমান্তে অনুপ্রবেশ রুখতে অসম (Assam) প্রশাসন সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma) জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত এবং আটক করতে…

Assam CM Himanta Biswa Sarma announces strict measures to curb infiltration along the Indo-Bangladesh border

বাংলাদেশ-ভারত (Indo-Bangladesh) সীমান্তে অনুপ্রবেশ রুখতে অসম (Assam) প্রশাসন সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma) জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত এবং আটক করতে অসম পুলিশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে অসম সরকার আধার কার্ড যাচাইকরণ প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে অসম পুলিশের ভূমিকা
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অসম পুলিশ এখন বিএসএফ-এর সঙ্গে মিলে সীমান্তে দ্বিতীয় স্তরের প্রতিরক্ষা হিসাবে কাজ করছে। এর ফলে অনেক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ত্রিপুরা পুলিশের সঙ্গেও সমন্বয় রেখে কাজ চলছে।”

   

অসমের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই রাজ্যটি অনুপ্রবেশের জন্য একটি সংবেদনশীল অঞ্চল। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের প্রবাহ সীমান্ত অঞ্চলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের এই নতুন পদক্ষেপ সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।

আধার যাচাইকরণ প্রক্রিয়ায় কঠোরতা
অসম মন্ত্রিসভা সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সাধারণ প্রশাসন বিভাগ (General Administration Department) আধার কার্ড যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার জন্য নোডাল বিভাগ হিসাবে কাজ করবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, “প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসক একজন অতিরিক্ত জেলা কমিশনারকে (ADC) আধার এনরোলমেন্ট যাচাইকরণের জন্য নিযুক্ত করবেন। এই প্রক্রিয়া এতটাই কঠোর করা হবে যাতে সন্দেহভাজন কেউ আধার কার্ড তৈরি করতে না পারে।”

আধার কার্ড আধুনিক ভারতের পরিচয় পত্র হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে অনুপ্রবেশকারীদের আধার কার্ড পাওয়ার ঘটনাগুলি বড় সমস্যা তৈরি করছে। এই সমস্যার সমাধানে অসম সরকারের এই পদক্ষেপ সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রশাসনের পদক্ষেপ এবং চ্যালেঞ্জ
অসম সরকার সীমান্ত এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহার এবং মানবসম্পদের উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। সীমান্তে ড্রোনের ব্যবহার, বিশেষ নজরদারি ক্যামেরা স্থাপন এবং আধুনিক সরঞ্জামের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ রোধ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে মুখ্যমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন যে এই কাজ চ্যালেঞ্জিং। অসম-বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু অংশে প্রাকৃতিক বাধা এবং দুর্গম এলাকা সীমান্ত নজরদারির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

জনগণের প্রতিক্রিয়া
অসমে অনুপ্রবেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ ছিল। স্থানীয়রা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন যে এই ধরনের কঠোর ব্যবস্থা এলাকার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। তবে কিছু বিরোধী গোষ্ঠী অভিযোগ তুলেছে যে এই পদক্ষেপগুলি মানুষের অসুবিধা বাড়াতে পারে এবং নিরপরাধ মানুষকে হেনস্তার শিকার হতে হতে পারে।

সীমান্ত সমস্যার প্রেক্ষাপট
অসম বহু দশক ধরে অনুপ্রবেশের সমস্যার মুখোমুখি। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে সীমান্তে অনুপ্রবেশ একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই অনুপ্রবেশ শুধুমাত্র স্থানীয় জনসংখ্যার মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে না, এটি রাজ্যের আর্থ-সামাজিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অসম সরকার এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য একটি বিস্তৃত কৌশল গ্রহণ করতে চায়। আধার যাচাইকরণ এবং সীমান্ত নজরদারির পাশাপাশি, সরকারের লক্ষ্য সুশৃঙ্খল অভিবাসন নীতি প্রণয়ন করা। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

অসম সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অনুপ্রবেশ রোধে নেওয়া পদক্ষেপগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী। আধার যাচাইকরণ প্রক্রিয়া কঠোর করা এবং সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করার মতো পদক্ষেপগুলি শুধু অনুপ্রবেশ রোধেই নয়, রাজ্যের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতেও সাহায্য করবে।

অসমের এই পদক্ষেপ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হতে পারে। তবে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে এই প্রক্রিয়ায় নিরপরাধ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সরকারের এই পদক্ষেপ সফল হলে এটি অন্যান্য রাজ্যগুলির জন্য একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।

Assam CM Himanta Biswa Sarma announces strict measures to curb infiltration along the Indo-Bangladesh border. Aadhaar verification to become more stringent to prevent misuse by suspected infiltrators.