অসম কংগ্রেসের মুখপাত্র রীতম সিংকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন, যেখানে তিনি তিনজন প্রবীণ বিজেপি নেতা—একজন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবং দুজন বর্তমান বিধায়ক—এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিলেন। গৌহাটিতে তাঁর বাড়ি থেকে লখিমপুর জেলা পুলিশের একটি দল তাঁকে গ্রেফতার করে, এবং এতে গৌহাটি পুলিশ সহায়তা করেছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
লখিমপুরের পুলিশ সুপার মিহিরজিৎ গয়ান পিটিআই-কে জানিয়েছেন, রীতম সিংকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিজেপি বিধায়ক মানব ডেকার স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে। অভিযোগে বলা হয়েছে, দুই দিন আগে সিং এক্স (X)-এ একটি পোস্ট করেছিলেন, যা মানব ডেকা এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কটূক্তিমূলক বলে বিবেচিত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই পোস্টে তিনি তিনজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার স্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যা বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শনিবার সকালে লখিমপুর পুলিশের একটি দল গৌহাটির পল্টন বাজার থানার সহায়তায় রীতম সিং-এর বাসভবনে পৌঁছায়। কংগ্রেস নেতারা অভিযোগ করেছেন, কোনও পূর্ব নোটিশ বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সিংকে গ্রেফতারের পর লখিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তাঁর বিরুদ্ধে আইপিসি-র ২৯৪ (অশ্লীল মন্তব্য) এবং ৫০০ (মানহানি) ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এই গ্রেফতারির পর কংগ্রেস দল তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। অসম কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ও সাংসদ গৌরব গগৈ এই ঘটনাকে ‘বিজেপি সরকারের স্বৈরাচারী শাসনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন বিরোধী কণ্ঠস্বর দমনের জন্য। গগৈ বলেন, “বিজেপি পুলিশের মাধ্যমে একটি ভয়ঙ্কর বার্তা দিচ্ছে—যদি তাদের বিরোধিতা করেন, তবে আপনাকে নিশ্চিহ্ন করা হবে।” তিনি আরও দাবি করেছেন, এই গ্রেফতারি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল।
অসম যুব কংগ্রেসও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। তারা এক্স-এ লিখেছে, “কোনও জানানো ছাড়াই আমাদের মুখপাত্র রীতম সিংকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটি আইনের নিয়মের পরিপন্থী।” কংগ্রেস নেতারা এই গ্রেফতারিকে ‘বাক স্বাধীনতার উপর আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
অন্যদিকে, বিজেপি এই গ্রেফতারিকে সমর্থন করেছে। লখিমপুরের বিধায়ক মানব ডেকার স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, রীতম সিং-এর পোস্টে তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য করা হয়েছে। বিজেপির একাংশের মতে, এই পোস্টটি শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং দলের ইমেজ নষ্ট করার একটি চেষ্টা। এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অসম পুলিশকে ধন্যবাদ, কংগ্রেসের এই মুখরোচক নেতাকে গ্রেফতার করার জন্য।” তবে, বিজেপি থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি।
এই গ্রেফতারি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ অসমে একটি নতুন পুলিশ অ্যাকাডেমির উদ্বোধন করতে এসেছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অসম বিধানসভার অধিবেশন শুরু হতে চলেছে, এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। গত বছরও রীতম সিংকে সামাজিক মাধ্যমে সম্পাদিত ভিডিও এবং আপত্তিকর মন্তব্য পোস্ট করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল, যা কংগ্রেসের ‘ওয়ার রুম’ সমন্বয়কারী হিসেবে তাঁর ভূমিকার সময় ঘটেছিল।
এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে বাক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। একজন বিশ্লেষক বলেন, “সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তোলার জন্য যদি গ্রেফতার করা হয়, তবে এটি গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আঘাত।” অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, রাজনৈতিক নেতাদের সামাজিক মাধ্যমে দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
লখিমপুর পুলিশ রীতম সিং-এর পোস্টটি পরীক্ষা করছে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁকে শীঘ্রই আদালতে হাজির করা হবে বলে জানা গেছে। কংগ্রেস দল আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে এবং এই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পরিকল্পনা করছে।
রীতম সিং-এর গ্রেফতারি অসমের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে চলমান সংঘাতকে আরও তীব্র করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তের ফলাফল এবং আদালতের সিদ্ধান্ত এই ঘটনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। আপাতত, এই গ্রেফতারি রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।