অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma) একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা জারি করেছেন, যা সমগ্র ভারতের জন্য একটি গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। তিনি জানিয়েছেন যে গত এক মাসে হঠাৎ করে ৫,০০০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সক্রিয় হয়েছে, যেগুলো প্রো-ইরান, প্রো-প্যালেস্টাইন এবং প্রো-মুহাম্মদ ইউনূস বিষয়ক সামগ্রী পোস্ট করছে। এই অ্যাকাউন্টগুলোর উৎস নিয়ে একটি বিস্তারিত ফরেনসিক অডিট পরিচালনা করা হয়েছে, যার ফলাফল অত্যন্ত চিন্তাজনক। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে ২,০৯২টির ওপর গবেষণা চলছে, এবং এর মধ্যে ৬১৮টি অ্যাকাউন্ট বাংলাদেশ থেকে, ২৩৬টি পাকিস্তান থেকে, দুটি প্যালেস্টাইন থেকে, ছয়টি ব্রাজিল থেকে, একটি কানাডা ও কোলম্বিয়া থেকে, ছয়টি মিশর থেকে, ৫৪টি ফ্রান্স থেকে, চারটি জার্মানি থেকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আরও অনেক অ্যাকাউন্ট সনাক্ত করা গেছে।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন যে এই অ্যাকাউন্টগুলোর ব্যবহারকারীগণ একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের, যারা কঠোর ইসলামিক মৌলবাদী হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, “এই লোকেরা রাহুল গান্ধী বা ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের পৃষ্ঠপোষকতা করে না। তারা কেবল অসম সংক্রান্ত পৃষ্ঠা এবং একজন রাজনৈতিক নেতা এবং অসম কংগ্রেসের কার্যকলাপের ওপর ফোকাস করে।” এই তথ্যগুলো থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে এটি একটি ইচ্ছাকৃত প্রচারণা হতে পারে, যা অসমের সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবনাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
এই ঘটনার পটভূমিতে, অসম সরকার এখন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে আরও গভীর তদন্ত চলছে, এবং প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা এই ধরনের গতিবিধিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি, কারণ এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি।” এই অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে ছড়ানো হওয়া বিষয়বস্তু ভারতের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংহতিকে ক্ষতি করতে পারে, তাই এর প্রতিরোধে দ্রুত কাজ করা জরুরি।
সামাজিক মাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিছু মতামত বলছে যে এটি একটি আন্তর্জাতিক সাইবার যুদ্ধের অংশ হতে পারে, যা ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে লক্ষ্য করে গড়ে উঠছে। অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন যে এই অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফাটল তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান বিপিন রাওয়াতের “০.৫ ফ্রন্ট যুদ্ধ” তত্ত্বটি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, যেখানে তিনি ভারতের মুখোমুখি হওয়া অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হুমকির কথা উল্লেখ করেছিলেন।
অসমের মতো সংবেদনশীল রাজ্যে এই ধরনের সাইবার কার্যকলাপ সামাজিক সংহতি ও শান্তি নষ্ট করতে পারে। তাই, রাষ্ট্রীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় এই হুমকির মোকাবিলা করা জরুরি। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং তাঁর দল এখন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কড়া নজর রাখছে এবং সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছে। এই ঘটনা ভারতের ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে উন্মোচন করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।