গুয়াহাটি: কিংবদন্তি গায়ক জুবিন গার্গের (Zubeen Garg) মৃত্যু রহস্যের তদন্তে এবার নয়া মোড়। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা করলেন যে, অসম সরকার গৌহাটি হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানাবে যাতে এই মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য একটি ফাস্ট-ট্র্যাক আদালত গঠন করা হয়।
এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সরকার চাইছে এই সংবেদনশীল মামলায় ন্যায়বিচার যেন দেরি না হয়। তাঁর কথায়, “মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ থাকে যে আদালতের রায় পেতে অনেক সময় লাগে। তাই আমরা গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাব, যাতে প্রতিদিন শুনানি হয় এবং দ্রুত রায় ঘোষণা করা যায়।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে একজন বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হবে, যিনি শুধু এই মামলার পক্ষেই আদালতে প্রতিনিধিত্ব করবেন। এই প্রসিকিউটর চার্জশিট দাখিল থেকে রায় ঘোষণার দিন পর্যন্ত একটানা যুক্ত থাকবেন। শর্মা বলেন, তিনি নিজে গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে এই বিষয়ে কথা বলবেন যাতে প্রক্রিয়াটি দ্রুত হয়।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) তাঁকে আশ্বাস দিয়েছে যে নভেম্বরের শেষের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।
এই মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছেন গায়কের আত্মীয় ও অসম পুলিশের উপ-পুলিশ অধীক্ষক সন্দীপন গার্গ। তাঁকে ভারতীয় ন্যায় সনহিতা (BNS) অনুযায়ী অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানো এবং হত্যার সমতুল্য অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যাল-এর মুখ্য আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত, গায়কের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং তাঁর ব্যান্ডের দুই সদস্য শেখর জ্যোতি গোস্বামী ও অমৃত প্রভা মহন্ত। সন্দীপন গার্গ, যিনি গায়কের আত্মীয়, সিঙ্গাপুরে ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় জনপ্রিয় শিল্পী জুবিন গার্গের। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন উত্তর-পূর্ব ভারতের সাংস্কৃতিক উৎসব ‘নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যাল’-এর চতুর্থ সংস্করণে অংশ নিতে। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে গোটা অসম শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে, এবং রাজ্য জুড়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হন ভক্ত ও সাংস্কৃতিক মহল।
মুখ্যমন্ত্রী আরও ঘোষণা করেন যে, জুবিন গার্গের শেষকৃত্যস্থলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই স্মৃতিসৌধের পরিকল্পনা ও নকশা নির্ধারণের জন্য ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে থাকছেন গায়কের স্ত্রী গরিমা গার্গ, বোন পালমি বোরঠাকুর এবং অসমের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা।
শর্মা বলেন, “জুবিন গার্গ শুধু একজন গায়ক নন, তিনি অসমের সংস্কৃতির প্রতীক। তাঁর মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।”