এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি) পাকিস্তানের (pakistan) জন্য ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (প্রায় ৬৮০০ কোটি টাকা) একটি বেলআউট প্যাকেজ অনুমোদন করেছে, যদিও ভারত পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের ইতিহাসের কারণে প্রতিবেশী এই দেশকে যেকোনো ধরনের আর্থিক সহায়তার বিরোধিতা করেছিল। এই উন্নয়ন ঘটেছে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৫০০ কোটি টাকা) প্যাকেজ নিশ্চিত করার এক মাস পর।
ভারতের আপত্তি ও উদ্বেগ
ভারত সরকারের সূত্র সংবাদমাধ্যকে জানিয়েছে যে, পাকিস্তানকে (pakistan) এডিবি থেকে যেকোনো আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিরুদ্ধে ভারত দৃঢ়ভাবে আপত্তি জানিয়েছে। ভারতের প্রধান উদ্বেগ হলো এই তহবিলের অপব্যবহার, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের সম্ভাবনা।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে পাকিস্তান (pakistan) সরকার বা তার গভীর রাষ্ট্রীয় কাঠামো সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও সমর্থন করে। এই আপত্তির পেছনে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির তথ্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্বলতা (pakistan)
ভারত তুলে ধরেছে যে পাকিস্তানের (pakistan) অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত ভঙ্গুর। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৩% ছিল কর রাজস্ব, যা ২০২৩ সালে কমে ৯.২%-এ নেমে এসেছে। এই হ্রাস পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ভিত্তির দুর্বলতা এবং কর সংগ্রহে অকার্যকর ব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত দেয়।
একই সঙ্গে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তান তার ফেডারেল বাজেটের প্রায় ১৮% প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে, যা তার অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই ব্যয় বৃদ্ধি এবং কর রাজস্বের হ্রাস পাকিস্তানের ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে, যা বর্তমানে মোট জিডিপির ৮০% ছাড়িয়েছে।
এডিবি’র বেলআউট প্যাকেজ
এডিবি’র এই ৮০০ মিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ পাকিস্তানের আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদার করতে এবং সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে ব্যবহৃত হবে বলে জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা খুররম শেহজাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই উন্নয়নের কথা নিশ্চিত করেছেন।
প্যাকেজটিতে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের একটি নীতি-ভিত্তিক ঋণ (পলিসি-বেসড লোন) এবং ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রোগ্রাম-ভিত্তিক গ্যারান্টি (পিবিজি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলো থেকে ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্থায়ন সংগ্রহ করতে পারে।
এডিবি’র পাকিস্তানের (pakistan) কান্ট্রি ডিরেক্টর এমা ফ্যান জানিয়েছেন, পাকিস্তান কর নীতি এবং শক্তি খাতের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে শক্তিশালী সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে। এই প্রোগ্রামটি কর নীতি, প্রশাসন, এবং সম্মতি উন্নত করার পাশাপাশি সরকারি ব্যয় এবং নগদ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করার জন্য গভীর সংস্কারকে সমর্থন করে।
ভারতের অবস্থান
ভারত এডিবি’র বোর্ডে পাকিস্তানের এই আর্থিক সহায়তার বিরোধিতা করেছে, যুক্তি দিয়ে বলেছে যে এই তহবিল সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের জন্য অপব্যবহৃত হতে পারে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দেশের অর্থনৈতিক বিষয়ে গভীরভাবে হস্তক্ষেপ করে, যা নীতি বাস্তবায়ন এবং সংস্কারের ধারাবাহিকতার জন্য উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
২০২১ সালের একটি রাষ্ট্রসংঘের প্রতিবেদনে পাকিস্তানের সামরিক-সংশ্লিষ্ট উদ্যোগগুলোকে দেশের বৃহত্তম সমষ্টি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতের আপত্তি শুধুমাত্র এডিবি’র ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়; এটি আইএমএফ-এর কাছেও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত ১০ মে আইএমএফ পাকিস্তানের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের তাৎক্ষণিক বিতরণ এবং ১.৪ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ঋণ অনুমোদন করে, যার বিরুদ্ধে ভারত ভোটদানে বিরত ছিল এবং তহবিলের অপব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক করেছিল।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট
পাকিস্তানের (pakistan) অর্থনীতি বর্তমানে গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে, যা মাত্র পাঁচ সপ্তাহের আমদানি চাহিদা মেটাতে সক্ষম। ২০২৪ সালে পাকিস্তানের মোট বৈদেশিক ঋণ ১৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা জিডিপির এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের মোট আয়ের ৪৩% ব্যয় হয়। এছাড়া, মুদ্রাস্ফীতি ২৮% ছাড়িয়েছে, এবং ২০২৫-২৬ সালে ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান বারবার আইএমএফ, এডিবি, এবং চীন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোর কাছে আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করছে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপট
এই আর্থিক সহায়তা অনুমোদনের ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনার সময় ঘটেছে। গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের জঙ্গি শিবিরগুলোতে ‘অপারেশন সিঁদুরের’ মাধ্যমে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়।
এই হামলায় পাকিস্তানের(pakistan) ছয়টি যুদ্ধবিমান, দুটি সার্ভিল্যান্স বিমান, দশটির বেশি ড্রোন এবং একটি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমান ধ্বংস হয়। পাকিস্তান এই হামলার জবাবে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করে, যা ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিহত হয়।
২১ নির্বাচনে শাসকদলের রোষ! আদালতের কাঠগড়ায় পুলিশ প্রশাসন
আন্তর্জাতিক সমালোচনা
ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী আইএমএফ-এর বোর্ড সভার আগে পাকিস্তানের (pakistan) বেলআউট প্রোগ্রামের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, গত তিন দশকে পাকিস্তানের জন্য বেশ কয়েকটি বেলআউট প্রোগ্রাম অনুমোদিত হয়েছে, কিন্তু খুব কমই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অর্থনৈতিক বিষয়ে অত্যধিক হস্তক্ষেপ সংস্কার বাস্তবায়নে ঝুঁকি তৈরি করে।
এডিবি’র ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বেলআউট প্যাকেজ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় একটি অস্থায়ী সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে, তবে ভারতের আপত্তি এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগ এই সহায়তার নৈতিক ও কৌশলগত দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং প্রতিরক্ষা ব্যয়ের প্রাধান্য এই তহবিলের কার্যকর ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।