ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (army-chief) টেরিটোরিয়াল আর্মি (টিএ)-এর সম্পূর্ণ শক্তি মোতায়েন এবং প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালনের জন্য সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এই পদক্ষেপ ভারতের উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই সমস্ত সেনা অফিসারদের নিজ নিজ ইউনিটে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
একটি বিজ্ঞপ্তি
৬ মে, তারিখে জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে, টেরিটোরিয়াল আর্মি রুলস, ১৯৪৮-এর ৩৩ নম্বর নিয়মের অধীনে, সরকার সেনাপ্রধানকে (army-chief) টেরিটোরিয়াল আর্মির প্রতিটি অফিসার এবং তালিকাভুক্ত সৈনিককে প্রয়োজন অনুযায়ী ডেকে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে।
এই নির্দেশের মাধ্যমে তাদের গার্ড ডিউটি বা নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীকে সমর্থন ও পরিপূরক করার জন্য সম্পূর্ণ মোতায়েনের জন্য নিয়োজিত করা যাবে। এই আদেশটি এমন এক সময়ে কার্যকর হয়েছে যখন ভারত পাকিস্তানের ক্রমাগত সীমান্ত-উত্তেজনা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার মুখোমুখি হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান ৩২টি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের মধ্যে ১৪টি ব্যাটালিয়নকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর (army-chief) সমস্ত প্রধান কমান্ডে মোতায়েনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই কমান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, মধ্য, উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম, আন্দামান ও নিকোবর, এবং আর্মি ট্রেনিং কমান্ড (এআরটিআরএসি)।
তবে, এই মোতায়েন বাজেটের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে মোতায়েনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ব্যয় বহন করতে হবে। এই আদেশটি ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৮ পর্যন্ত তিন বছরের জন্য কার্যকর থাকবে।
অপারেশন সিঁদুর ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
এই ক্ষমতা প্রসারণ ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর ’-এর পরবর্তী সামরিক তৎপরতার প্রেক্ষাপটে এসেছে, যে অপারেশনে পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে নির্ভুল হামলা চালানো হয়েছিল। ৮-৯ মে রাতে, পাকিস্তান ৫০টিরও বেশি ড্রোন ব্যবহার করে ভারতের অন্তত ১৫টি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে একটি সমন্বিত হামলা চালায়।
উধমপুর, সাম্বা, জম্মু, আখনুর, নাগরোটা এবং পাঠানকোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এই হামলার লক্ষ্য ছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যেমন এল-৭০ গান, জেডইউ-২৩এমএম, শিলকা প্ল্যাটফর্ম এবং কাউন্টার-ইউএএস সরঞ্জাম ব্যবহার করে এই ড্রোন হামলা সফলভাবে প্রতিহত করে।
ভারত পাকিস্তানের বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং এক ডজনেরও বেশি শহরে সামরিক স্থাপনায় হামলার প্রচেষ্টার জবাবে প্রতিশোধমূলক নির্ভুল হামলা চালিয়েছে। এই হামলাগুলো পাকিস্তানের লাহোরে বিমান প্রতিরক্ষা স্থাপনা সহ অন্যান্য কৌশলগত অবস্থানকে লক্ষ্য করেছিল।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (army-chief) এক বিবৃতিতে বলেছে, “কাইনেটিক এবং নন-কাইনেটিক ক্ষমতা ব্যবহার করে হুমকিগুলো দ্রুত নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।” মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, ভারত তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
টেরিটোরিয়াল আর্মির গুরুত্ব (army-chief)
টেরিটোরিয়াল আর্মি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা নিয়মিত সেনাবাহিনীকে সমর্থন প্রদান করে। এটি স্বেচ্ছাসেবী নাগরিকদের নিয়ে গঠিত, যারা প্রয়োজনের সময় সামরিক দায়িত্ব পালন করে। টিএ-এর মোতায়েন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি এবং সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিফলন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার নিশ্চিত করছে যে, সীমান্তে ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে সেনাবাহিনী পর্যাপ্ত জনবল ও সম্পদ দিয়ে সজ্জিত থাকবে।
মোদীর কড়া নজর গুজরাট সীমান্তে, ফোন গেল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে
পাকিস্তানের আগ্রাসন ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক হামলাগুলো ভারতের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৮-৯ মে রাতে পাকিস্তানের ড্রোন হামলাগুলো শুধু সামরিক স্থাপনাই নয়, বেসামরিক এলাকাকেও লক্ষ্য করেছিল। এই হামলায় জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলায় বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যেখানে ১২ জন বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সৈনিক নিহত হয়েছেন।
ভারত সরকার এই হামলাকে “অযৌক্তিক এবং নির্বিচারে” হিসেবে নিন্দা করেছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের রাষ্ট্রীয় সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। ভারতের প্রতিশোধমূলক হামলাগুলো পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোর উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। অপারেশন সিন্দুরের অধীনে ভারত জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবা’র নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে, যেখানে প্রায় ১০০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (army-chief) এই অপারেশনকে “অসাধারণ নির্ভুলতার” সঙ্গে সম্পন্ন বলে প্রশংসা করেছেন।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুর তাদের নাগরিকদের জম্মু ও কাশ্মীর এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কাতার, স্পেন, ইরান, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশ উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে।
সরকারের প্রস্তুতি
ভারত সরকার এই সংকট মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। টেরিটোরিয়াল আর্মির মোতায়েন ছাড়াও, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সুবিধাগুলোকে জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা সম্প্রতি একটি পর্যালোচনা বৈঠকে স্বাস্থ্য অবকাঠামোর প্রস্তুতি নিশ্চিত করেছেন।
টেরিটোরিয়াল আর্মি মোতায়েনের জন্য সেনাপ্রধানের ক্ষমতা প্রসারণ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অটল প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। পাকিস্তানের ক্রমাগত আগ্রাসনের মুখে ভারত তার সামরিক (army-chief) ও বেসামরিক প্রস্তুতি জোরদার করছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, এবং দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সংকট মোকাবিলার আহ্বান জানানো হয়েছে।