শুক্রবার রাতে, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিচালক ও অভিনেতা অনুরাগ কাশ্যপ (anurag) তাঁর সাম্প্রতিক বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়েছেন। এই বিতর্কিত মন্তব্যটি তিনি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের প্রতি করেছিলেন। অনুরাগের সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র ‘ফুলে’ সম্পর্কিত একটি বক্তব্য ঘিরে তৈরী হয়েছিল বিতর্ক।
ইনস্টাগ্রামে একটি বিস্তারিত পোস্টে কাশ্যপ (anurag) লিখেছেন, “কোনো কাজ বা কথা আপনার মেয়ে, পরিবার বা বন্ধুদের থেকে বেশি মূল্যবান নয়।” এর আগে, শুক্রবার দিনের শুরুতে, ‘মহারাজা’ অভিনেতা তাঁর একটি বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হন, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে তিনি “ব্রাহ্মণদের উপর প্রস্রাব করবেন।”
কাশ্যপ (anurag) লিখেছেন
তাঁর ক্ষমা প্রার্থনার পোস্টে কাশ্যপ লিখেছেন, “এটি আমার ক্ষমা প্রার্থনা, আমার পোস্টের জন্য নয়, বরং প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন সেই একটি লাইন এবং এর ফলে সৃষ্ট ঘৃণার জন্য। কোনো কাজ বা কথা আপনার মেয়ে, পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের ধর্ষণ ও মৃত্যুর হুমকির মূল্য নয়, যা সংস্কারের কিছু নেতারা দিচ্ছেন। যা বলা হয়েছে তা ফিরিয়ে নেওয়া যায় না — এবং আমি তা ফিরিয়ে নেব না। তবে আপনি যদি কাউকে গালাগাল করতে চান, তবে তা আমার দিকে নির্দেশ করুন। আমার পরিবার কিছু বলেনি, তারা কখনোই প্রকাশ্যে কথা বলে না।”
তিনি আরও লিখেছেন, “সুতরাং, যদি আপনারা ক্ষমা প্রত্যাশা করেন, তবে এটি আমার ক্ষমা। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়, দয়া করে নারীদের রেহাই দিন — এমনকি শাস্ত্রেও এই সামান্য শালীনতার কথা বলা হয়েছে, শুধু মনুস্মৃতি নয়। আপনারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিন, আপনারা কেমন ব্রাহ্মণ। আমার পক্ষ থেকে, আমি আমার ক্ষমা প্রার্থনা জানাচ্ছি।”
বিতর্কের পটভূমি
অনুরাগ কাশ্যপের (anurag) এই মন্তব্যটি তাঁর সাম্প্রতিক প্রকল্প ‘ফুলে’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, যা সমাজ সংস্কারক জ্যোতিরাও ফুলে ও তাঁর স্ত্রী সাবিত্রীবাই ফুলের জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র। এই প্রকল্পটি ইতিমধ্যেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ কিছু গোষ্ঠী মনে করে যে এটি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছে। কাশ্যপের মন্তব্য এই বিতর্ককে আরও উসকে দেয়, এবং সামাজিক মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
কাশ্যপের এই মন্তব্যের পর, অনেকেই তাঁকে “ব্রাহ্মণ-বিদ্বেষী” হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন, এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার ঘটনাও সামনে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি তাঁর ক্ষমা প্রার্থনায় স্পষ্ট করেছেন যে তিনি তাঁর মূল পোস্টের জন্য ক্ষমা চাইছেন না, বরং তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা এবং এর ফলে সৃষ্ট ঘৃণার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন।
গুজরাট বনাম দিল্লি ম্যাচে ভাঙতে পারে পাঁচ বড় রেকর্ড
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
কাশ্যপের (anurag) ক্ষমা প্রার্থনা সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। কেউ কেউ তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন যে তিনি তাঁর মূল অবস্থান থেকে সরে আসেননি, অন্যরা মনে করছেন যে তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা যথেষ্ট আন্তরিক নয়। একজন মাধ্যম ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অনুরাগ কাশ্যপের ক্ষমা প্রার্থনা একটি আধা-ক্ষমা। তিনি তাঁর কথা ফিরিয়ে নেননি, বরং বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছেন।” অন্যদিকে, তাঁর সমর্থকরা বলছেন যে তাঁর মন্তব্য প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং তিনি শুধুমাত্র তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অনুরাগ কাশ্যপ
অনুরাগ কাশ্যপ বলিউডের একজন প্রভাবশালী চলচ্চিত্র নির্মাতা, যিনি ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’, ‘মুক্কাবাজ’, ‘মানমারজিয়াঁ’ এবং ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’-এর মতো সমালোচকদের প্রশংসিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তিনি তাঁর স্পষ্টবাদী মনোভাব এবং সমাজের সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য পরিচিত। তবে, এই ধরনের বিতর্ক তাঁর ক্যারিয়ারে নতুন নয়। অতীতেও তিনি তাঁর মতামতের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছেন, তবে তাঁর ভক্তরা তাঁকে একজন নির্ভীক শিল্পী হিসেবে সমর্থন করে চলেছেন।
‘ফুলে’ প্রকল্প ও এর তাৎপর্য
‘ফুলে’ চলচ্চিত্রটি জ্যোতিরাও ফুলে ও সাবিত্রীবাই ফুলের জীবন ও কাজের উপর আলোকপাত করবে, যাঁরা ভারতীয় সমাজে শিক্ষা ও নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই প্রকল্পটি সমাজের পশ্চাদপদ শ্রেণির উন্নয়নের জন্য তাঁদের অবদানের কথা তুলে ধরার লক্ষ্য রাখে। তবে, কিছু গোষ্ঠী এই চলচ্চিত্রকে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটি আখ্যান হিসেবে দেখছে, যা এই বিতর্কের অন্যতম কারণ।
সামনের দিনগুলো
অনুরাগ কাশ্যপের এই ক্ষমা প্রার্থনা বিতর্ককে কতটা শান্ত করবে, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে, তাঁর মন্তব্য এবং ক্ষমা প্রার্থনা ভারতীয় সমাজে বর্ণ, শ্রেণি এবং সামাজিক সংস্কারের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনাকে আরও জোরদার করেছে। এই ঘটনা একইসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমের শক্তি এবং এর মাধ্যমে সৃষ্ট বিভাজনের প্রকৃতিও প্রকাশ করেছে।
কাশ্যপের এই পদক্ষেপ তাঁর ভক্ত এবং সমালোচকদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে। তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ এবং ‘ফুলে’ চলচ্চিত্রের মুক্তি এই বিতর্কের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ঘটনা আমাদের সকলকে প্রশ্ন করে — স্বাধীন মতপ্রকাশের সীমা কোথায়, এবং কীভাবে আমরা একটি সম্মানজনক ও গঠনমূলক সংলাপ গড়ে তুলতে পারি?