ইন্দোর: মধ্যপ্রদেশের অনূপপুর জেলায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাক্ষী রইল প্রশাসন। আদালতের এক বিচারকের বাড়িতে হামলা, পাথর ছোড়া ও প্রাণনাশের হুমকি এমন অপরাধে তিনজন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিশোধ নেওয়া, কারণ সংশ্লিষ্ট বিচারক কিছু মাস আগে এক অভিযুক্তের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে, ভালুমাড়া থানার অন্তর্গত এলাকায়। অভিযুক্ত তিন যুবক প্রিয়াংশু সিং ওরফে ‘জাগুয়ার’ (২৫), দেবেন্দ্র কেবট (২৩) এবং মনিকেশ সিং (১৯) সবাই ভালুমাড়া এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয় পুলিশের দাবি, ঘটনার সময় তিনজনই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল।
যমুনায় ভাসছে ফেনা! বিজেপির বিরুদ্ধে ‘মিথ্যের’ অভিযোগে সরব কংগ্রেস
আক্রান্ত বিচারক, কোটমা আদালতের প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও সিভিল বিচারপতি অমন্দীপ সিং ছাবড়া। তিনি তাঁর সরকারি আবাসন থেকে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন,রবিবার গভীর রাতে, প্রায় রাত ১২টা ৩০ মিনিটের সময়, কয়েকজন যুবক তাঁর বাড়ির গেট ও লোহার ফিটিংস ভাঙচুর করে। এরপর তাঁরা বাড়িতে ঢুকে পাথর ছোড়া শুরু করে এবং জোরে জোরে গালিগালাজ করে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে।
অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তৎক্ষণাৎ এলাকায় অভিযান চালায়। আনূপপুর জেলার পুলিশ সুপার মোতিউর রহমান এক সংবাদ সংস্থাকে জানান, “এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি প্রতিশোধমূলক হামলা। বিচারক সাহেব প্রায় পাঁচ-ছয় মাস আগে এক অভিযুক্তের জামিন নামঞ্জুর করেছিলেন, সেই কারণেই এই আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়।”
কোটমা থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় খালকো জানান, ঘটনার পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। “রাতের নীরবতা ভেঙে বিচারকের বাড়ির বাইরে পাথর ছোড়া, গালিগালাজ— পুরো পাড়ায় চরম আতঙ্ক তৈরি হয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করি।”
তদন্তে উঠে এসেছে, মূল অভিযুক্ত প্রিয়াংশু সিং ওরফে ‘জাগুয়ার’ একজন অভ্যাসগত অপরাধী। তাঁর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একাধিক অপরাধমূলক মামলা রজু রয়েছে। এইবারও তিনজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায়সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রাণনাশের হুমকি, সরকারি কর্মচারীর ওপর হামলা, সম্পত্তি নষ্ট করা এবং জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার রাতে অভিযুক্তরা একটি মোটরসাইকেলে করে বিচারকের বাড়ির সামনে আসে। প্রথমে তারা গেটের লাইট ও লোহার গ্রিল ভেঙে দেয়, তারপর পাথর ছুড়তে শুরু করে। সৌভাগ্যবশত, বিচারক ও তাঁর পরিবারের কেউ আহত হননি, তবে বাড়ির কিছু অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা পুলিশ এই ঘটনাকে “বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি” হিসেবে দেখছে। পুলিশ সুপার মোতিউর রহমান বলেন, “কোনও বিচারক বা সরকারি আধিকারিককে ভয় দেখানোর চেষ্টা আইনের পরিপন্থী। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনার পর আদালত ও প্রশাসনিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জেলা বিচারক থেকে শুরু করে অন্যান্য বিচারকরা প্রশাসনের কাছে তাঁদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ প্রশাসন ইতিমধ্যেই বিচারকদের বাসস্থানের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত টহল বসানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য, এই ঘটনা শুধু একজন বিচারকের ওপর আক্রমণ নয়, এটি আইন ও বিচারব্যবস্থার মর্যাদার উপর সরাসরি আঘাত। সাধারণ মানুষও অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন। পুলিশ তিনজনকেই হেফাজতে নিয়েছে এবং তদন্ত চলছে। আদালত আগামী দিনে এদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের নির্দেশ দিতে পারে।


