প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী জেল থেকে সরকার চালাবেন? প্রশ্ন শাহের

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah)বুধবার লোকসভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করেছেন, যা ভারতের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। এই বিলগুলি হলো সংবিধান (১৩০তম…

Amit Shah in parliament

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah)বুধবার লোকসভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করেছেন, যা ভারতের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। এই বিলগুলি হলো সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিল, ২০২৫, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকার (সংশোধনী) বিল, ২০২৫ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল, ২০২৫।

এই বিলগুলির প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী যদি গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে জেলে থাকেন, তবে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া। অমিত শাহ বলেছেন, “এখন দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে, জেলে থাকা অবস্থায় কোনো মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর সরকার চালানো উচিত কিনা।” এই বিলগুলি সংসদের যৌথ কমিটিতে পাঠানো হয়েছে আরও বিশদ পরীক্ষার জন্য।

   

এই বিলগুলির প্রস্তাব অনুযায়ী, যদি কোনো প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী পাঁচ বছর বা তার বেশি সাজার অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে টানা ৩০ দিন জেলে থাকেন, তবে ৩১তম দিনে তাঁদের পদ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপসারণ করা হবে।

তবে, জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁরা পুনরায় নিযুক্ত হতে পারবেন। এই আইনের লক্ষ্য হলো সাংবিধানিক নৈতিকতা রক্ষা করা এবং জনগণের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখা। সরকারের বক্তব্য, জেলে থাকা কোনো নেতা সরকারের দায়িত্ব পালন করলে তা প্রশাসনিক স্থবিরতা এবং জনগণের আস্থার ক্ষয় ঘটায়।

এই বিলগুলি পেশের সময় লোকসভায় বিরোধী দলের তীব্র প্রতিবাদ দেখা গেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা বিলের কপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান, এবং বিরোধী দলের নেতারা এই বিলকে ‘স্বৈরাচারী’ এবং ‘সংবিধান-বিরোধী’ বলে অভিহিত করেছেন।

কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি টুইটে বলেছেন, এই বিল কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতার করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেছেন, গত বছর দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছয় মাস জেলে থাকার পরও সরকার চালিয়েছিলেন।

অমিত শাহ কংগ্রেসের সমালোচনার জবাবে বলেছেন, তিনি নিজে গুজরাটের গৃহমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১০ সালে গ্রেফতার হওয়ার আগে পদত্যাগ করেছিলেন এবং মামলা থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কোনো সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত হননি।

তিনি দাবি করেছেন, এই বিল রাজনৈতিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোদী সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং জনগণের ক্ষোভের প্রতিফলন। তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, তারা সংবিধানের ৩৯তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখার চেষ্টা করেছিল।

Advertisements

বিরোধী দলের নেতারা, যেমন এআইএমআইএম-এর আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, এই বিলকে ‘পুলিশ রাষ্ট্র’ গড়ার প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁরা বলছেন, এই আইন কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দেবে। তবে, কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর এই বিলকে ‘যুক্তিসংগত’ বলে মন্তব্য করেছেন, যদিও তাঁর দলের সামগ্রিক অবস্থান এর বিরোধিতা করছে।

বর্তমানে ভারতের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতারের পর পদে থাকার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বিধান নেই। সংসদ সদস্য বা বিধায়কদের ক্ষেত্রে রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল অ্যাক্ট অনুযায়ী দুই বছর বা তার বেশি সাজার দণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হলে অযোগ্য ঘোষিত হন।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে এমন কোনো আইন নেই। অতীতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তামিলনাড়ুর মন্ত্রী ভি. সেন্থিল বালাজি জেলে থাকা সত্ত্বেও পদে থেকেছিলেন, যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।

এই বিলগুলি সংসদে পাশ হলে ভারতের রাজনৈতিক নৈতিকতা ও প্রশাসনিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপিত হবে। তবে, বিরোধী দলের অভিযোগ, এই আইন কেন্দ্রের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দেবে এবং বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে অস্থিতিশীল করার হাতিয়ার হতে পারে।

২০২৬-এর আগে সীমান্ত জেলায় সংগঠন মজবুতির বার্তা অভিষেকের

এই বিলগুলি এখন যৌথ সংসদীয় কমিটির পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। বিজেপির সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে লোকসভায় এই বিল পাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, রাজ্যসভায় তীব্র বিতর্ক এবং বিরোধিতার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আইন ভারতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং সাংবিধানিক কাঠামোর উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।