২০২৬ এর মধ্যে ভারতকে মাও-মুক্ত করার বার্তা অমিত শাহের

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) শুক্রবার রাজ্যসভায় গৃহ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার জবাবে জানিয়েছেন যে, নরেন্দ্র মোদী সরকারের সন্ত্রাসবাদের প্রতি শূন্য সহনশীলতার নীতি রয়েছে।…

amit shah

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) শুক্রবার রাজ্যসভায় গৃহ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার জবাবে জানিয়েছেন যে, নরেন্দ্র মোদী সরকারের সন্ত্রাসবাদের প্রতি শূন্য সহনশীলতার নীতি রয়েছে। তিনি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ভারতে মাওবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হবে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সরকারের কঠোর অবস্থান এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

রাজ্যসভায় বিতর্কের জবাবে শাহ আরও বলেন, মোদী সরকার সংবিধানের প্রণেতাদের স্বপ্ন পূরণ করেছে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের মাধ্যমে। তিনি জানান, “আর্টিকেল ৩৭০ ছিল কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদের ভিত্তি। তবে আমি সংবিধানের প্রণেতাদের ধন্যবাদ জানাই, কারণ তারা এই ধারাটিকে অস্থায়ী করেছিলেন এবং এটি বাতিলের পথও সংবিধানে রেখেছিলেন।” তিনি অভিযোগ করেন যে, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি এবং জেদের কারণে এতদিন এই ধারা বহাল ছিল। “২০১৯ সালে আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের মাধ্যমে আমরা সংবিধান প্রণেতাদের স্বপ্ন পূরণ করেছি—এক দেশে দুই প্রধান, দুই সংবিধান এবং দুই পতাকা থাকতে পারে না,” তিনি যোগ করেন।

   

জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে ৭০ শতাংশ হ্রাস
অমিত শাহ জানান, জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ, বামপন্থী উগ্রবাদ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহ ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তিনি বলেন, “গত চার দশকে প্রায় ৯২,০০০ নাগরিক এই সন্ত্রাসবাদের বলি হয়েছেন। পূর্ববর্তী সরকারগুলো এই সমস্যা মোকাবিলায় কোনও সংগঠিত প্রচেষ্টা করেনি, কিন্তু মোদী সরকার তা করে দেখিয়েছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবাদের প্রতি সরকারের শূন্য সহনশীলতা নীতির কারণে জম্মু ও কাশ্মীরে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

তথ্য দিয়ে শাহ জানান, মোদী সরকারের আমলে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ শতাংশ কমেছে এবং সন্ত্রাসবাদী ঘটনাও তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। “নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কাশ্মীর উপত্যকায় পাথর ছোঁড়ার ঘটনা শূন্যে নেমে এসেছে,” তিনি বলেন। তিনি আরও জানান, গ্রাম ও শহরে স্থানীয় স্তরে নির্বাচনের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। “২০১৯-২৪ সালের মধ্যে প্রায় ৪০,০০০ সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে, ১.৫১ লক্ষ স্ব-নিয়োগ সৃষ্টি হয়েছে এবং দক্ষতা উন্নয়ন ক্লাবগুলো কার্যকর হয়েছে,” তিনি যোগ করেন।

২০২৬ সালের মধ্যে মাওবাদের অবসান
মাওবাদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অমিত শাহ পূর্ববর্তী সরকারগুলোর উপর নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বলেন, “মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মাওবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, ২০২৬ সালের ২১ মার্চের মধ্যে এই দেশে মাওবাদ সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাবে।” তিনি জানান, সরকারের নীতি ও বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে নকশাল প্রভাবিত এলাকাগুলোতে শান্তি ও উন্নয়ন ফিরে আসছে।

উত্তর-পূর্বে শান্তি ও উন্নয়নের নতুন যুগ
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে শাহ বলেন, “এই অঞ্চল এখন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে উত্তর-পূর্বে উন্নয়নের এক নতুন যুগ শুরু হয়েছে।” তিনি জানান, ২০১৯ সাল থেকে প্রায় ১৯টি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং এই সময়ে প্রায় ১০,০০০ জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। “আমরা উত্তর-পূর্বের জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছি এবং তাদের উন্নয়নের মূল স্রোতে নিয়ে এসেছি,” তিনি বলেন।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বারবার জোর দিয়েছেন যে, মোদী সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কোনও আপস করবে না। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য এই দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করা। জম্মু ও কাশ্মীর, নকশাল প্রভাবিত এলাকা এবং উত্তর-পূর্ব—সব জায়গায় আমরা শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।” তিনি আরও জানান, সরকারের এই প্রচেষ্টার ফলে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেক উন্নত হয়েছে এবং জনগণের মধ্যে আস্থা বেড়েছে।
শাহ তাঁর বক্তব্যে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সমালোচনা করে বলেন, “অতীতে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য অনেক সমস্যা সমাধান করা হয়নি। কিন্তু আমরা জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি।” তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মাওবাদ দমন এবং উত্তর-পূর্বে উন্নয়নের কৃতিত্ব মোদী সরকারের দৃঢ় নেতৃত্বের উপর দিয়েছেন।

অমিত শাহের এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, মোদী সরকার জাতীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল থেকে শুরু করে মাওবাদ নির্মূল এবং উত্তর-পূর্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা—সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কার্যক্রম দেশের জনগণের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে মাওবাদের অবসানের ঘোষণা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি ভারতের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার রূপরেখা আরও স্পষ্ট করেছে।