শাহী পদক্ষেপে মণিপুরে ৪০০০ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন

মণিপুরের ক্রমবর্ধমান অশান্তি ও হিংসাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। সোমবার দিল্লিতে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসে তিনি রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি…

Amit Shah Deploys 4,000 Central Forces to Manipur

short-samachar

মণিপুরের ক্রমবর্ধমান অশান্তি ও হিংসাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। সোমবার দিল্লিতে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসে তিনি রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন। ANI-র রিপোর্ট অনুযায়ী, এটি পরপর দ্বিতীয় দিন যখন মণিপুরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

   

পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং বিশেষ নির্দেশ
বৈঠকে মণিপুরের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ দেন, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (CAPFs) এবং রাজ্য পুলিশ যৌথভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মণিপুরে অতিরিক্ত ৫০টি CAPF কোম্পানি, অর্থাৎ ৫,০০০ জনেরও বেশি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হবে। এর আগে কয়েকদিন আগেই ২০টি CAPF কোম্পানি রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল।

হিংসাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কড়া ব্যবস্থা
রাজ্যের অস্থির পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সরকারের তরফে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রবিবার, দিল্লির বাসভবনে অমিত শাহ একটি জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়। এই কারণে, তিনি মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে নির্ধারিত জনসভা এবং ২০ নভেম্বরের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার স্থগিত রাখেন।

মণিপুরে কী ঘটছে?
মণিপুরে নতুন করে হিংসার সূত্রপাত হয়েছে জিরিবামে ছয়টি মৃতদেহের সন্ধানের পর। নিহতদের মধ্যে তিনজন মহিলা এবং তিনজন শিশু ছিল, যাদের অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সোমবার, জিরিবামের একটি শরণার্থী শিবির থেকে ৬ জনকে অপহরণ করা হয়। জানা গেছে, এই ঘটনাটি ঘটে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে এক বন্দুকযুদ্ধের পর, যেখানে ১০ জন জঙ্গি নিহত হয়।

অপরাধ ও হিংসা নিয়ন্ত্রণে, জিরিবামে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা। ক্ষুব্ধ জনতা তিনজন বিজেপি বিধায়ক এবং একজন কংগ্রেস বিধায়কের বাড়িতে আগুন লাগায়। এছাড়াও, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পৈতৃক বাড়িতে হামলার চেষ্টাও ব্যর্থ করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।

অতিরিক্ত বাহিনীর মোতায়েন
অমিত শাহের নির্দেশে, পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রায় ৪০০০ জন নিরাপত্তারক্ষী পাঠানো হয়েছে। এর ফলে রাজ্যে মোট কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।

মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ
বিগত কয়েক মাসে মণিপুরের অস্থির পরিস্থিতি জাতীয় স্তরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। নতুন করে হিংসার ঘটনা এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি এবং কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমেই পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের বার্তা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর পাশাপাশি, রাজ্যের প্রশাসনিক এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া কেন্দ্রের প্রধান লক্ষ্য। আগামীদিনে মণিপুরে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ফেরাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।