Sharmistha Mukherjee: প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি কংগ্রেসের প্রতি তার এক প্রকাশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘X’-এ একটি পোস্টে দাবি করেছেন, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তার বাবা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে যথাযথ শ্রদ্ধা জানানো হয়নি। তার মতে, কংগ্রেস নেতৃত্বে তাঁর বাবার প্রয়াণের পর একেবারেই তৎপরতা দেখায়নি, যা তাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।
শর্মিষ্ঠার পোস্টে তিনি লিখেছেন, “যখন বাবা মারা যান, কংগ্রেস একটিও সেন্ট্রাল ওয়েলফেয়ার কমিটি (CWC) শোক সভার আয়োজন করেনি। এক সিনিয়র নেতা আমাকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতিদের জন্য এটা করা হয় না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে, কারণ আমি পরে বাবার ডায়রিতে জানলাম যে, কেআর নারায়ণনের মৃত্যুতে CWC সভা ডাকা হয়েছিল এবং শোক বার্তা প্রস্তুত করেছিলেন বাবাই।”
শর্মিষ্ঠার ক্ষোভ
শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য কংগ্রেসের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে। তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা কংগ্রেস দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি তার অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়। তাঁর এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। শর্মিষ্ঠা বলেছেন, যে ধরনের সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রাপ্য ছিল, কংগ্রেস তা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে দেয়নি। শর্মিষ্ঠা মনে করেন, তার বাবার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস এই অমান্যতা প্রদর্শন করেছিল।
রাজনৈতিক পরিবেশ ও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অবদান
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু কংগ্রেস দলের জন্য একটি গভীর শোকের মুহূর্ত ছিল। তিনি দীর্ঘকাল ধরে দলের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন এবং ভারতীয় রাজনীতিতে তার অবদান অবিস্মরণীয়। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতির পদে থেকে তিনি দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার মৃত্যু কংগ্রেসের জন্য একটি বড় ক্ষতি, তবে শর্মিষ্ঠার অভিযোগ, দলের তরফ থেকে যথাযথ শ্রদ্ধা জানানো হয়নি।
CWC শোক সভার ঐতিহ্য
কংগ্রেসের ঐতিহ্য অনুযায়ী, দলের শীর্ষ নেতারা যখন মারা যান, তখন CWC সভা ডাকা হয় এবং তাদের প্রতি শোক নিবেদন করা হয়। কিন্তু শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের দাবি, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে কংগ্রেস এই প্রথা অনুসরণ করেনি। তার মতে, কেআর নারায়ণনের মৃত্যুর সময় এটি ঘটেছিল, আর প্রণব বাবুর মৃত্যুতে কেন এমন কিছু করা হলো না, তা তার কাছে অজানা। তিনি আরও জানান, বাবার ডায়রিতে উল্লেখ ছিল যে, কেআর নারায়ণনের প্রয়াণে কংগ্রেস নেতারা শোক সভার আয়োজন করেছিলেন এবং শোক বার্তাও বাবাই প্রস্তুত করেছিলেন।
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া
কংগ্রেস দলের তরফ থেকে এখনও শর্মিষ্ঠার অভিযোগের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শর্মিষ্ঠার এই মন্তব্য কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের জন্য একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেস এই অভিযোগের বিরুদ্ধে কিছু বলবে কিনা, তা দেখতে হবে।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রভাব
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন ছিল মসৃণ এবং প্রজ্ঞার পরিপূর্ণ। তিনি দলের মধ্যে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তেমনি রাষ্ট্রপতির পদে থেকেও ভারতের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিলেন। তার শাসনকালে, ভারতের পররাষ্ট্র নীতি এবং অর্থনীতি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণবের অবদান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের এই অভিযোগ কংগ্রেসকে কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে, বিশেষত দলের পুরনো নেতাদের প্রতি কর্তব্য এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন নিয়ে।
শর্মিষ্ঠার বক্তব্যের প্রভাব
শর্মিষ্ঠার এই বক্তব্য কেবল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এটি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কংগ্রেসে চলমান অস্থিরতা, নতুন নেতৃত্বের অভাব এবং দলের মধ্যে ভাঙনের গুঞ্জন আরও তীব্র হতে পারে। শর্মিষ্ঠার এই বক্তব্যের ফলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব বাড়তে পারে, বিশেষ করে তাদের ঐতিহ্য এবং দলের প্রতি সম্মানজনক আচরণের দিকে যদি তেমন কোনও অগ্রগতি না হয়।
শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের কংগ্রেসের প্রতি অভিযোগ একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে এসেছে। তার পোস্ট থেকে পরিষ্কার যে, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিককে যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি কেবল তার পরিবারকেই আঘাত দেয়নি, বরং ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসেও একটি বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে।