পহেলগাঁও হামলার পর কড়া নিরাপত্তায় আজ অমরনাথের পথে প্রথম যাত্রী দল

আজ বুধবার সকালে জম্মুর ভগবতী নগর বেস ক্যাম্প থেকে অমরনাথ যাত্রার (Amarnath Yatra 2025) প্রথম দল রওনা দেবে।  পহেলগাঁওয়ে গত ২২ এপ্রিল জঙ্গি হামলার পর…

Amarnath Yatra 2025: First Batch Leaves Jammu Today Under Unprecedented Security After Pahalgam Attack

আজ বুধবার সকালে জম্মুর ভগবতী নগর বেস ক্যাম্প থেকে অমরনাথ যাত্রার (Amarnath Yatra 2025) প্রথম দল রওনা দেবে।  পহেলগাঁওয়ে গত ২২ এপ্রিল জঙ্গি হামলার পর এবারের ৩৮ দিনব্যাপী অমরনাথ যাত্রার জন্য নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা, যিনি শ্রী অমরনাথজি শ্রাইন বোর্ডের চেয়ারম্যান, আজ সকালে পহেলগাঁও এবং বালতালের দুটি বেস ক্যাম্পের দিকে যাত্রীদের প্রথম দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেবেন। যাত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে আগামীকাল, ৩ জুলাই থেকে।

পহেলগাঁও হামলার প্রভাব এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরান মেডোতে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক এবং একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। এই হামলার জন্য দায় স্বীকার করেছিল দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যিনি লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা বলে মনে করা হয়। হামলার পর থেকে তিনজন পাকিস্তানি জঙ্গিকে খুঁজে বের করতে ব্যাপক অ্যান্টি-টেরর অপারেশন চালানো হলেও তারা এখনও ধরা পড়েনি। এই ঘটনা অমরনাথ যাত্রার নিরাপত্তার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

   

এই পরিস্থিতিতে, যাত্রার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা অভূতপূর্বভাবে জোরদার করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ, সিআরপিএফ, বিএসএফ, আইটিবিপি, এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী সহ প্রায় ৬০০টি অতিরিক্ত প্যারামিলিটারি কোম্পানি মোতায়েন করা হয়েছে, যা যাত্রার ইতিহাসে সর্বোচ্চ। প্রতিটি কোম্পানিতে ১০০-১১০ জন সৈন্য রয়েছে। জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় মহাসড়ক (NH-44) এবং যাত্রার পথে কে-৯ (কুকুর) দল, ড্রোন, এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম (FRS) স্থাপন করা হয়েছে। পহেলগাঁও রুটে FRS সিস্টেমটি রিয়েল-টাইমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সক্ষম। এছাড়া, সমগ্র যাত্রা এলাকা ১ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলে হেলিকপ্টার পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে।

যাত্রার রুট এবং ব্যবস্থা
অমরনাথ যাত্রা দুটি প্রধান রুটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়: ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী নুনওয়ান-পহেলগাঁও রুট এবং ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কিন্তু খাড়া বালতাল রুট। পহেলগাঁও রুটটি দীর্ঘ হলেও তুলনামূলকভাবে সহজ, আর বালতাল রুটটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু চ্যালেঞ্জিং। এই দুটি রুটে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিংয়ের জন্য রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) ট্যাগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জম্মু থেকে বালতাল এবং পহেলগাঁও বেস ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য বিনামূল্যে বাস পরিষেবা এবং অন্যান্য লজিস্টিক ব্যবস্থা করেছে সরকার।

জম্মুর ভগবতী নগর যাত্রী নিবাস থেকে প্রতিদিন দুটি কনভয় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পহেলগাঁও এবং বালতালের দিকে রওনা দেবে। এছাড়া, স্বাস্থ্য, জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ, এবং পরিচ্ছন্নতার জন্য জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের শতাধিক কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছে। পাঞ্জতর্নি এবং উপরের ক্যাম্পগুলিতে ১০০ শয্যার হাসপাতাল এবং জরুরি চিকিৎসা দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শ্রী অমরনাথজি শ্রাইন বোর্ড (SASB) এই বছর যাত্রাকে শূন্য-বর্জ্য করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

যাত্রী নিবন্ধনের উপর প্রভাব
পহেলগাঁও হামলার পর অমরনাথ যাত্রার নিবন্ধনে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গেছে। হামলার আগে ২.৩৬ লক্ষ যাত্রী নিবন্ধন করেছিলেন, কিন্তু হামলার পর তা ১০.১৯% কমে ৮৫,০০০-এ দাঁড়িয়েছে। তবে, লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা জানিয়েছেন, নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে যাত্রীদের আস্থা ফিরছে এবং নিবন্ধনের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তিনি সকল ভক্তদের বেশি সংখ্যায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

Advertisements

যাত্রীদের মধ্যে উৎসাহ অটুট রয়েছে। মুম্বাইয়ের শক্ষদীপ ঝা বলেন, “আমরা পহেলগাঁও রুট দিয়ে যাত্রা করব। আমাদের ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর পূর্ণ আস্থা আছে।” কলকাতার সরিতা ঘোষ, যিনি ৯৫ জনের একটি দলের সঙ্গে এসেছেন, বলেন, “এই যাত্রা পহেলগাঁওয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি উপায়। আমরা সন্ত্রাসের ভয়ে পিছু হটব না।”

নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি
জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়কে নিয়মিত পেট্রোলিং, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল, এবং জ্যামার স্থাপন করা হয়েছে। উধমপুরের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। জম্মুতে সরস্বতী ধাম, বৈষ্ণবী ধাম, এবং মহাজন সভায় নিবন্ধন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন ২,০০০ টোকেন বিতরণ করা হচ্ছে। সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট মনু হানসা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বৈধ টোকেনধারী যাত্রীদের এগোতে দেওয়া হবে।

এছাড়া, জম্মুর যাত্রী নিবাসে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, সিসিটিভি, এবং লঙ্গর এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাঠুয়ায় ৩৬টি থাকার কেন্দ্র এবং ৬টি RFID নিবন্ধন কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সিমুলেশনের জন্য জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়কে ভূমিধস ড্রিল করা হয়েছে, যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো যায়।

পহেলগাঁও হামলা সত্ত্বেও অমরনাথ যাত্রা ২০২৫ ভক্তদের উৎসাহে মুখরিত। সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী একটি নিরাপদ এবং সুষ্ঠু তীর্থযাত্রা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যাত্রীদের দৃঢ় বিশ্বাস এবং সরকারের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এই যাত্রাকে সফল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।