Amarnath Yatra: পহেলগাঁও হামলার পর আতঙ্ক নিয়েই অমরমাথ যাত্রীরা তৈরি, কড়া নিরাপত্তা

পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলা ও নির্বিচারে পর্যটক খুনের পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি শিবিরগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযান জারি রয়েছে…

Amarnath Yatra

পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলা ও নির্বিচারে পর্যটক খুনের পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি শিবিরগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযান জারি রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার ফের দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি আলিপুরদুয়ারে একটি জনসভায় বলেন, ‘যারা পহেলগাঁও ঘটিয়েছে, তাদের সিঁদুরের শক্তি বুঝিয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। কল্পনাই করতে পারেনি পাকিস্তান। অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি। তিন বার ঘরে ঢুকে মেরেছি। হামলা হলে শত্রুদের আবার বড় মূল্য দিতে হবে।’

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরে নাশকতার আশঙ্কা থাকছে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর এবার কড়া নিরাপত্তায় শুরু হচ্ছে অমরনাথ যাত্রা। হিন্দু তীর্থ অমরনাথ যাত্রা কাশ্মীরের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্থানীয় কাশ্মীরি মুসলিমরা এই যাত্রায় যাত্রী সেবা করেন। ঐতিহাসিক নথিতে জানা যায় আক্রম বাট মালিক নামে এক কাশ্মীরি মেষপালক অমরনাথ গুহার আবিষ্কারক।

   

আগামী তেসরা জুলাই থেকে শুরু হতে চলা বার্ষিক অমরনাথ যাত্রার জন্য চারপাশের এলাকা এবং যাত্রাপথে পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় কেন্দ্র, আধা সামরিক জওয়ান মোতায়েন করতে চলেছে। সুষ্ঠু ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে মোট ৫৮১ কোম্পানী আধাসামরিক জওয়ান কাজে নামানো হবে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর সাথে কথা বলতে গিয়ে, সরকারি সূত্র জানিয়েছে যে নিরাপদ যাত্রাপথ নিশ্চিত করার জন্য ৪২৪টি কোম্পানিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। অপারেশন সিন্দুরের সময় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্থানান্তরিত কোম্পানিগুলিকেও স্থানান্তরিত করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সিএপিএফ বাহিনীকে “অবিলম্বে” কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবস্থান গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।সিআরপিএফ, বিএসএফ, সিআইএসএফ, আইটিবিপি এবং এসএসবি- এই পাঁচটি সিএপিএফ থেকে এই কোম্পানিগুলি তৈরি করা হয়েছে। এই কোম্পানিগুলির প্রতিটিতে প্রায় ৭০-৭৫ জন কর্মী রয়েছেন।

পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর অমরনাথ যাত্রার জন্য উচ্চস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু সফরের সময় তীর্থযাত্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবেন।

অমরনাথ যাত্রা ৩ জুলাই শুরু হবে এবং ৯ আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত চলবে। ৩৮ দিনের এই যাত্রা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৩,৮৮০ মিটার উঁচু পবিত্র গুহায় নিয়ে যাবে যেখানে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি বরফের শিবলিঙ্গ রয়েছে।তীর্থযাত্রীরা অনন্তনাগ জেলার পহেলগাম থেকে ৪৮ কিলোমিটার ঐতিহ্যবাহী পথ অথবা গান্দেরবাল জেলার ১৪ কিলোমিটার ছোট কিন্তু খাড়া বালতাল পথের মধ্যে একটি বেছে নিতে পারেন।

অমরনাথ যাত্রায় জঙ্গি হামলা কাশ্মীরের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। গত কয়েক দশকে এই পুণ্যযাত্রায় একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে।

Advertisements

অমরনাথ যাত্রায় অতীতের উল্লেখযোগ্য জঙ্গি হামলা:

(ক). ২০০০ সালের হামলা: ১ ও ২ আগস্ট, অনন্তনাগ ও ডোডা জেলায় একাধিক সমন্বিত আক্রমণে ৮৯ থেকে ১০৫ জন নিহত ও ৬২ জন আহত হন। এই হামলার জন্য দায়ী ছিল পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা।

(খ). ২০০১ সালের হামলা: ২০ জুলাই, শেশনাগ হ্রদে দুটি বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণে ১৩ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হন। এই হামলাতেও লস্কর-ই-তৈবা জড়িত ছিল।

(গ). ২০০২ সালের হামলা: ৩০ জুলাই ও ৬ আগস্ট, নুনওয়ান বেস ক্যাম্পে হামলায় ১১ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। আক্রমণকারী ছিল লস্কর-ই-তৈবার সহযোগী সংগঠন আল-মানসুরিয়ান।

(ঘ). ২০১৭ সালের হামলা: ১০ জুলাই, অনন্তনাগ জেলায় একটি বাসে হামলায় ৮ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হন। এই হামলার জন্য লস্কর-ই-তৈবা দায়ী হলেও তারা দায় স্বীকার করেনি।

আতঙ্ক নিয়েই নাম নথিভুক্ত
পহেলগাঁওতে পর্যটকদের উপর হামলায় ২৬ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হন। এটি কাশ্মীরের মাটিতে অন্যতম ভয়াবহ হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে, অমরনাথ যাত্রার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি গুজরাট থেকে যাত্রী বুকিংয়ে ৯০% হ্রাস দেখা গেছে। পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর হুমকি সত্ত্বেও ২০২৫ সালের অমরনাথ যাত্রার জন্য রেজিস্ট্রেশনে ভিড় বাড়ছে।