কাসভ বিচার পেলে ইয়াসিন নয় কেন? কাশ্মীরি সন্ত্রাসী নেতার শুনানি নিয়ে সিবিআইকে ‘সুপ্রিম’ খোঁচা

গত ২০২২ সালের মে মাসে ইয়াসিন মালিককে (Yasin Malik) সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তিনি নিজেই…

Ajmal Kasav can get justice, than why not Yasin Malik? SC asks CBI over Kashmir separatist leader case

গত ২০২২ সালের মে মাসে ইয়াসিন মালিককে (Yasin Malik) সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তিনি নিজেই আদালতে সন্ত্রাসবাদী  কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা মেনে নিয়েছিলেন। যদিও ইয়াসিন মালিক একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, তবুও তার প্রতি সুবিচার ও মানবাধিকারকে মান্য করা উচিত কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।   

শীতকালীন অধিবেশনের আগেই রাজ্যের ওয়াকফ বিলের খুঁটিনাটি জানতে চায় কেন্দ্র

এই বিতর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মুম্বই ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার অভিযুক্ত আজমল কসাব এবং ইয়াসিন মালিকের বিচারের মধ্যে তুলনা। আজমল কসাবকে (Ajmal Kasav) যিনি মুম্বইয়ের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছিলেন, ন্যায়বিচারের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং তাকে ফাঁসির দণ্ডও দেওয়া হয়েছিল। কসাবের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন উঠেনি, কারণ তাকে সঠিক বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দণ্ডিত করা হয়েছিল।

তবে এখন যখন ইয়াসিন মালিকের বিচারের বিষয়টি উঠেছে, তখন এর সঙ্গে তুলনা চলে আসছে কসাবের মামলার। এমনকি, সুপ্রিম কোর্টেও প্রশ্ন উঠেছে, “যদি কসাবের মতো একজন সন্ত্রাসবাদী যদি ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হতে পারে, তবে ইয়াসিন মালিক কেন সে সুযোগ পাবেন না?” এর উত্তরে, অনেকের ধারণা, ইয়াসিন মালিকের ক্ষেত্রে বিচারিক প্রক্রিয়া চালানো তার বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ এবং স্বাধীনতার জন্য তার দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা কঠিন হতে পারে

সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) (CBI) তার আপত্তি জানিয়ে বলেছে যে, ইয়াসিন মালিককে জম্মুর আদালতে হাজির করানোর চেষ্টা করা হলে তা দেশের নিরাপত্তা সমস্যায় জড়িত হতে পারে এবং তা বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের প্রতি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সিবিআইয়ের দাবি, ইয়াসিন মালিককে জামিন দেওয়া এবং তাকে আদালতে হাজির করানো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

প্রমাণ ছাড়াই নিজ্জর হত্যা মামলায় মোদীকে দায়ী করল কানাডার সংবাদমাধ্যম

তবে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) এই বিষয়টি নিয়ে জোরালো প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষ করে যখন কসাবের মতো এক জন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীকে ন্যায়বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নে রয়েছে গভীর দৃষ্টিভঙ্গি— কিভাবে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে যুক্ত অপরাধীকে একইভাবে বিচার করা হবে? এর উত্তরে, বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পক্ষে একটি ভারসাম্য রক্ষা করার প্রয়োজন।

Advertisements

ইয়াসিন মালিকের বিচারের প্রশ্নে মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, তবুও তার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি মানবিক দৃষ্টিকোণ অবলম্বন করা উচিত। যেমন কসাবের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এবং মানবাধিকার আইন অনুসরণ করা হয়েছিল, তেমনি ইয়াসিন মালিকের ক্ষেত্রে তাদেরও সুবিচারের অধিকার রয়েছে।

লাওসে রাজনাথের সঙ্গে বৈঠক চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা দুপক্ষের

বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে ইয়াসিন মালিকের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, তাকে ন্যায়বিচারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আদালতের কাজ হলো, আইন ও সুবিচার নিশ্চিত করা, এবং কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে এটি প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।

ভারতের কাশ্মীর পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত চাপযুক্ত। কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নিয়ে, এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। সুতরাং, ইয়াসিন মালিকের বিচারের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক চাপ থাকতে পারে। তবে একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অধিকারী হওয়া উচিত যাতে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বিচারকে প্রভাবিত না করে।