সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-এর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকে বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হলো বিশ্ব। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) অজিত ডোভাল (Ajit Doval) পাকিস্তানের বিতর্কিত মানচিত্র প্রদর্শনের ঘটনায় সভা থেকে বেরিয়ে যান। এক্ষেত্রে তাঁর এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক মহলে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত ওই বৈঠকে পাকিস্তানের প্রতিনিধি এমন একটি রাজনৈতিক মানচিত্র উপস্থাপন করেন, যেখানে জম্মু-কাশ্মীর ও জুনাগড়কে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। এ বিষয়ে আগে থেকেই এসসিও-র পরিষ্কার নিয়ম ছিল যে কোনো সদস্য রাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বিতর্ক বা বিবাদকে এই ফোরামে তুলে ধরতে পারবে না। কিন্তু পাকিস্তান নিয়ম ভঙ্গ করে ভারতের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি কূটনৈতিক আঘাত হানে।
ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি তৎক্ষণাৎ রাশিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, কারণ রাশিয়াই ছিল বৈঠকের আয়োজক। ভারত স্পষ্টভাবে জানায়, এই ধরনের অবৈধ ও ভুয়ো মানচিত্র কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পাকিস্তান তার অবস্থান থেকে সরতে অস্বীকার করলে, অজিত ডোভাল প্রতিবাদস্বরূপ বৈঠক ত্যাগ করেন।
রাশিয়া ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করে জানায়, তারা পাকিস্তানের এহেন কার্যকলাপকে সমর্থন করে না। রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান নিকোলাই পাত্রুশেভ ডোভালের পদক্ষেপকে সম্মান জানান এবং বলেন, ভারতের অংশগ্রহণ যেন ভবিষ্যতে কোনোভাবে প্রভাবিত না হয়। এর ফলে, পাকিস্তানের প্রচারণা কেবল ব্যর্থই হয়নি, বরং আন্তর্জাতিক মহলে ভারত আরও দৃঢ় বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে।
অজিত ডোভালকে(Ajit Doval) প্রায়ই ‘সুপার স্পাই’ বলা হয় তাঁর কর্মজীবনের জন্য। একসময় কাঁচা দাড়ি-গোঁফে ছদ্মবেশে পাকিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন, আবার অন্যদিকে মিজো শান্তি চুক্তি থেকে শুরু করে অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডার—সব ক্ষেত্রেই তাঁর দৃঢ় ভূমিকা নজিরবিহীন। তাই এসসিও বৈঠকে তাঁর এই প্রতিবাদও ভারতের একেবারে পরিচিত অবস্থানকে প্রতিফলিত করেছে—সার্বভৌমত্বে কোনো আপস নয়।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ‘ডোভালের ওয়াকআউট’ ব্যাপকভাবে শিরোনাম হয়। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাকিস্তান মানচিত্র প্রদর্শন করে একদিকে যেমন কূটনৈতিক লাভের আশায় ছিল, অন্যদিকে তা ভারতের প্রতি কটাক্ষ হিসেবেও ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু উল্টে ভারতের শক্ত প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানকেই চাপে ফেলে দেয়।
ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ একদিকে চীন-রাশিয়া-সহ বিভিন্ন শক্তিধর দেশের অংশগ্রহণে গঠিত এসসিও আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রভাবশালী একটি মঞ্চ, অন্যদিকে পাকিস্তান সেই সুযোগ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করেছিল। ডোভালের ওয়াকআউট সেই অপপ্রচারের দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিক্রিয়া জানানো বলেই বিশেষজ্ঞদের মত।
সর্বোপরি, ভারতের বার্তা স্পষ্ট—দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতায় কোনো প্রকার আঘাত হলে, ভারত কূটনৈতিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না। অজিত ডোভালের এই পদক্ষেপ শুধু কূটনৈতিক লড়াই নয়, বরং ভারতের জাতীয় আত্মমর্যাদারও প্রতীক হয়ে উঠেছে।