চার বছর আগে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান (Galwan vally) উপত্যকায় ভারত ও চিনের (India China Relation) সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের পর, ওই রক্তাক্ত ঘটনার স্মৃতি এখনও মুছতে পারেনি। গালওয়ান উপত্যকায় যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে, তাতে ভারতীয় সেনার ২০ জন জওয়ান শহীদ হন, এবং চিনের পক্ষেও বেশ কিছু সেনা নিহত হয়। এই সংঘর্ষের পর ভারত-চিন সম্পর্ক গভীর সংকটে পড়েছিল, এবং অঞ্চলটি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তবে, প্রায় চার বছর পর, গত মাসে ভারত ও চিন এলএসি (প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা) সংক্রান্ত টহলদারির সীমানা নির্ধারণ এবং সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে।
এখন, এই প্রেক্ষাপটে, মঙ্গলবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) অজিত ডোভাল (Ajit Doval) চিনের রাজধানী বেজিং পৌঁছেছেন, যেখানে তিনি চীনের বিদেশমন্ত্রী ও বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এটি ভারতের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যেখানে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির পাশাপাশি সামরিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে ভারত ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুসংহত করার পাশাপাশি সীমান্তের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।
গালওয়ান সংঘর্ষের পর, উভয় দেশই সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নানা আলোচনা শুরু করে। শীর্ষ পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে, তবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সেনাদের মধ্যে সঙ্ঘাতের ঝুঁকি কমানোর জন্য একটি দৃঢ় ও কার্যকর সমঝোতা প্রয়োজন ছিল। এই প্রেক্ষাপটে, গত মাসে দিল্লি এবং বেজিংয়ের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা হয়, যেখানে দুই দেশের সেনাবাহিনী সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা প্রত্যাহার (ডিসএনগেজমেন্ট) করতে সম্মত হয়। এই পদক্ষেপ দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সম্পর্ক আরও মজবুত করার পাশাপাশি গালওয়ান প্রক্রিয়া থেকে অনেকটাই শিথিল হতে সহায়ক হবে।
অজিত ডোভালের এই সফর এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে সমঝোতা কার্যকর করার জন্য এক নতুন ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ডোভাল এবং ওয়াং ইর বৈঠকের সময়, এই দুই দেশ সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে, নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। চীনের সঙ্গে ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে এবং এই বৈঠকের মাধ্যমে চীনকে সহযোগিতা ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক বড় সুযোগ আসতে পারে।
উল্লেখযোগ্য, ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হবে, যেখানে সীমান্ত উত্তেজনা, উভয় দেশের সম্পর্কের উন্নতি এবং ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক যোগাযোগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই সফর ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতির জন্য একটি মাইলফলক হতে পারে, বিশেষত যখন আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলি তীব্রতর হচ্ছে।