ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা দোভাল-রুবিওর

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল (Ajit Doval) পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওকে) জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) হামলার পরপরই…

Ajit Doval Briefs US Secretary Marco Rubio After India’s Precision Strikes on Pakistan

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল (Ajit Doval) পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওকে) জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) হামলার পরপরই মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিওর (Marco Rubio) সঙ্গে ফোনে আলোচনা করেছেন। ওয়াশিংটন ডিসি-তে ভারতীয় দূতাবাসের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অজিত দোভাল এই হামলার বিষয়ে রুবিওকে বিস্তারিতভাবে অবহিত করেছেন। ভারত বুধবার ভোরে পাকিস্তান ও পিওকে-তে নয়টি জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে মিসাইল হামলা চালিয়েছে, যা গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচালিত হয়েছে।

ভারতীয় দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারতের এই পদক্ষেপ কেন্দ্রীভূত এবং নির্ভুল ছিল। এটি সুনির্দিষ্ট, দায়িত্বশীল এবং অ-উত্তেজনামূলক প্রকৃতির ছিল। কোনো পাকিস্তানি বেসামরিক, অর্থনৈতিক বা সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়নি। শুধুমাত্র পরিচিত জঙ্গি ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে।” বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, “হামলার পরপরই এনএসএ দোভাল মার্কিন এনএসএ এবং বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে ভারতের পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন।”

   

পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন নাগরিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারত পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গিদের স্পষ্ট জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারতের কাছে বিশ্বাসযোগ্য সূত্র, প্রযুক্তিগত তথ্য, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্রমাণ রয়েছে, যা এই হামলায় পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গিদের সরাসরি সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেয়।” এই ঘটনার পর পাকিস্তানের কাছে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রত্যাশা করা হয়েছিল, কিন্তু গত দুই সপ্তাহে পাকিস্তান অস্বীকারের মনোভাব প্রকাশ করেছে এবং ভারতের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অভিযান’-এর অভিযোগ তুলেছে।

এই হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভারত ইতিমধ্যে ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত করেছে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনাও বেড়েছে, যার জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, বাহাওয়ালপুর ও মুজাফফরাবাদে বিস্ফোরণের ঘটনায় বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও এর আগে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন। তিনি পহেলগাঁও হামলায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। রুবিও পাকিস্তানকে হামলার নিন্দা জানাতে এবং তদন্তে সহযোগিতা করতে বলেছেন। তিনি উভয় দেশকে উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সৌদি আরব, কাতার এবং ইরানের মতো দেশগুলো ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘও উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের পরামর্শ দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

অজিত দোভালের মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। তিনি অতীতে ২০১৯ সালের বালাকোট হামলার সময়ও মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন। এই আলোচনা ভারতের পদক্ষেপের বৈধতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এখন দুই দেশের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছে।

Advertisements