হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) সিমলার জুব্বারহাটি বিমানবন্দরে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায়, উপ-মুখ্যমন্ত্রী (Deputy CM) মুকেশ অগ্নিহোত্রী এবং রাজ্যের পুলিশ মহানির্দেশক (ডিজিপি) অতুল ভার্মাকে বহনকারী একটি বিমান সোমবার সকালে ল্যান্ডিংয়ের সময় নির্ধারিত স্থানে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই বিমানে ৩০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিমানটি রানওয়ে পেরিয়ে গিয়ে বিমানবন্দরের প্রান্তে থাকা স্টাডের (ধাতব বাধা) সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে। এই ঘটনায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও, যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিমানটি দিল্লি থেকে সিমলার উদ্দেশে সকালে রওনা হয়েছিল। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দিল্লিতে রুটিন চেকআপের পর বিমানটি উড়ানের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু জুব্বারহাটিতে ল্যান্ডিংয়ের সময় এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। বিমানটি রানওয়ের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়ে স্টাডের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। তবে, সৌভাগ্যবশত কোনো যাত্রীর গুরুতর আঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরপরই বিমানবন্দরের কর্মীরা এবং জরুরি পরিষেবা দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইঞ্জিনিয়াররা বর্তমানে বিমানটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে। তবে, এটি নিশ্চিতভাবে জানার জন্য বিস্তারিত তদন্তের অপেক্ষায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। জুব্বারহাটি বিমানবন্দরের ভৌগোলিক অবস্থান এবং ছোট রানওয়ের কারণে এখানে ল্যান্ডিং প্রায়ই চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এই বিমানবন্দরে আবহাওয়ার পরিস্থিতিও পাইলটদের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
ঘটনার সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত কিছু প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বিমানটি ল্যান্ডিংয়ের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গতিতে ছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “বিমানটি যখন রানওয়েতে নামল, তখন মনে হচ্ছিল এটি থামতে পারবে না। শেষে এটি রানওয়ে ছাড়িয়ে গিয়ে স্টাডে ধাক্কা খেল। আমরা সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” আরেকজন যাত্রী জানান, “আমাদের আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। হঠাৎ করেই বিমানটি থামার চেষ্টা করল, এবং তারপর ধাক্কার শব্দ হল।”
উপ-মুখ্যমন্ত্রী মুকেশ অগ্নিহোত্রী এবং ডিজিপি অতুল ভার্মা ছাড়াও বিমানে আরও ৩০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। ঘটনার পর তাদের নিরাপদে বিমান থেকে নামানো হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। উপ-মুখ্যমন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের জানান, “আমরা সকালে দিল্লি থেকে সিমলায় এসেছি। ল্যান্ডিংয়ের সময় কিছু সমস্যা হয়েছিল। আমি প্রযুক্তিগত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, তবে এটুকু বলতে পারি, বিমানটি মাটিতে স্পর্শ করার পরও সঠিকভাবে থামতে পারেনি। তবে আমরা সবাই নিরাপদে আছি।” তিনি আরও বলেন, তদন্তের পরই এর সঠিক কারণ জানা যাবে।
হিমাচল প্রদেশে বাঙালি সম্প্রদায়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বসবাস করেন, বিশেষ করে সিমলার মতো শহরে। এই ঘটনার খবরে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একজন বাঙালি বাসিন্দা বলেন, “সিমলায় আমার পরিবার থাকে। এই খবর শুনে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সৌভাগ্য যে বড় ক্ষতি হয়নি।” পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে হিমাচলের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক ও পর্যটন সম্পর্ক রয়েছে, তাই এই ঘটনা বাঙালিদের মধ্যেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
জুব্বারহাটি বিমানবন্দরের পরিচালক কেপি সিং জানিয়েছেন, “ঘটনার পর বিমানটিকে পরীক্ষার জন্য গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে। আমরা পুরো তথ্য পাওয়ার পরই বিস্তারিত বলতে পারব। আপাতত ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটি।” ঘটনার পর সিমলা থেকে ধরমশালার উদ্দেশে নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
এই ঘটনা জুব্বারহাটি বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ও অবকাঠামোর বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পাহাড়ি এলাকার এই বিমানবন্দরে আগেও ল্যান্ডিংয়ে সমস্যার খবর এসেছে। তবে, এবার উপ-মুখ্যমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিমানে থাকায় ঘটনাটি আরও আলোচনায় এসেছে। তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে সবাই, এবং আশা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত, সব যাত্রীর নিরাপদে থাকার খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে সিমলার জনগণ।